মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০১ অপরাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : ঘুম থেকে ওঠেই ফেসবুকে ঢুকতে একটা দৃশ্য দেখে চোখ আটকে গেলো, দৃশ্যটি দেখে নিজের অজান্তেই চোখের কোনায় জল এসে গেলো, কি নিষ্ঠুর নির্দয় এই পৃথিবীর মানুষ গুলো,
হয়তো খাঁটিয়া না পেয়ে এই ভাবে লাশটিকে বাঁশে ঝুলিয়ে দাফনের জন্য নেওয়া হচ্ছে, পাড়াপ্রতিবেশির কথা বাদ দিলাম, কিন্তু তার পরিবার মা-বাবা ভাই বোন তারা কোথায়?
হয়তো তারাও ভাইরাসের ভয়ে লাশটি দাফন করতে আসেনি, ভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে হয়তো গ্রামবাসী খাঁটিয়াও দেয়নি, হাসরের ময়দানের কঠিন মুহূর্তের কথা আমরা কুরআন হাদিসের বাণীতে শুনেছি, কিন্তু করোনা না আসলে জানতেই পারতাম না যে এই পৃথিবীতে আসলেই কেউ কারো আপন নয়।
ঘটনাটি ঠিক কথায় ঘটছে তা আমি জানিনা, কিন্তু ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃশ্যটি ভাইরাল হয়ে যায়, আসলে আমি লেখার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, পরিশেষে একটা গানের কলি মনে পড়লো ..
এই পৃথিবী যেমনি আছে তেমনি পড়ে রবে..
সুন্দর এই পৃথিবী একদিন ছেড়ে যেতে হবেরে মন, ছেড়ে যেতে হবে।
মন কার লাগিয়া কান্দ দিবা রতি, ভেবে দেখো কেউ হবেনা তোমার সঙ্গের সাথী।
আরো পড়ুন: কেমন ছিল আমার বিশ্বনবী (সাঃ) এর বিছানা !
মসজিদে নববীর ভিতরে মহানবীর (সাঃ) ছোট একটা কামরা ছিল। কখনো-সখনো তিনি ঐ কামরায় বিশ্রাম নিতেন। এই ঘরে আসবাব-পত্র বলতে কিছুই ছিল না। শুধু ছিল একটা পানির কলস আর একটা বিছানা। একে বিছানাই বা কিভাবে বলা যায়? এটা ছিল খেজুরের ডালের কিছু চাটাই মাত্র।
একদিন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) মহানবীর (সাঃ) সেই কামরায় প্রবেশ করলেন। মহানবী (সাঃ) শুয়ে ছিলেন। উমার (রা.) আসায় উঠে বসলেন, সালাম বিনিময় করলেন। উমার (রা.) দেখলেন খেজুরের চাটাই এ শোয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পিঠে লাল-লাল দাগ হয়ে গেছে।
রাসূলের (সাঃ) পিঠের এই অবস্থা দেখে ডুকরে কেঁদে উমার (রা.) বলে উঠলেন— “ও রাসূলুল্লাহ! দুনিয়ার বাদশা কাইসার ও কিসরা বিলাসবহুল আয়েশী জীবন যাপন করছে, আর আপনি আল্লাহর রাসূল দোজাহানের সরদার হয়েও সামান্য খেজুরের ছালের বিছানায় শুয়ে আছেন!”
এ সময় মুসলিমদের অর্থনৈতিক অবস্থা কি খারাপ ছিল? না, মোটেও না। এই ঘটনাটি ৭ম অথবা ৮ম হিজরীর দিকের, যখন কিনা মুসলিমরা ইতোমধ্যেই আরব ভূখণ্ডের একটা বিশাল অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে, যার নেতৃত্বে আছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ।
এ কারণেই, উমার (রা.) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী দুই বাদশা— রোমান বাদশা হিরাক্লিয়াস (কাইসার) ও পারস্যের বাদশা কিসরা-এর বিলাসী জীবনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাইছিলেন— ঐসব বাদশাহরা যেখানে এত আরাম-আয়েশে প্রাসাদ নিয়ে থাকতে পারে, সেখানে আপনি একটু আরামদায়ক বিছানায় ঘুমালে ক্ষতি কী?
ভেবে দেখুন– আপনি যদি খুব কষ্টদায়ক কোন বিছানায় শুয়ে থাকেন, আর আপনার বন্ধু তখন আপনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলে— ‘আহা এই বিছানায় তোমার বড় কষ্ট হচ্ছে বন্ধু!’ তাহলে আপনি এর জবাবে কী বলবেন? আমরা হয়তো বলব, ‘হ্যাঁ বন্ধু, ঠিকই বলেছ। আসলেই অনেক কষ্ট হচ্ছে, এটা বদলে ফেলা দরকার।’
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি এরকম কিছু বলেছিলেন? তিনি (সাঃ) কি উমার (রা.)-এর এই সমবেদনা প্রকাশে খুশী হয়েছিলেন? মোটেই না! কারণ, তিনি আমাদের মত সাধারণ মানুষ না, তিনি ছিলেন অসাধারণ, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)।
তিনি লক্ষ্য রাখতেন, পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ যাতে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না যায়, অতিরিক্ত আরামদায়ক বিছানা যেন তাহাজ্জুদের নামাজে উঠার বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। উমার (রা.) এর কথায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বরং কিছুটা বিরক্তই হলেন। তিনি (সাঃ) বললেন— ‘উমার।
তুমি কি এতে খুশী নও তাদের জন্য দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখিরাত?’ এ তো গেল মসজিদের কামরার বিছানা। মহানবীর (সাঃ) নিজের বাসার বিছানা কেমন ছিল? তাঁর স্ত্রী আয়িশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল যে বিছানায় ঘুমাতেন তা চামড়ার ছিল, এর ভেতরে খেজুর গাছের পাতা ভরা হত।’
লক্ষ্যণীয় যে, চামড়া কিন্তু ম্যাট্রেস তৈরির উপাদান না, চামড়ার বিছানা আরামদায়কও না। আরবরা চামড়া ব্যবহার করত উট বা ঘোড়ার জিন তৈরিতে। চামড়ার সেই শক্ত বিছানাকে কিছুটা সহনীয় করার জন্য সাহাবীরা এর ভেতর খেজুর পাতা ভরে দিতেন।
আরেক স্ত্রী হাফসার (রা.) ঘরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিছানা বলতে ছিল পাতলা এক চট। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এই কষ্টদায়ক বিছানা লক্ষ্য করে হাফসা (রা.) একবার এক কাজ করে বসলেন। তিনি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ঘুমানোর চট— যেটাকে সচরাচর দুই ভাঁজ করা হতো, সেটাকে এক রাতে চার ভাঁজ করে দিলেন।
হাফসা (রা.) ভেবেছিলেন এতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘুমের কিছুটা আরাম হবে। অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক বিছানার কারণে সেই রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটু বেশি ঘুমালেন। সকালে তিনি (সাঃ) যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন জিজ্ঞেস করলেন— বিছানার বিষয়টা কী? হাফসা (রা.) তখন তাঁকে (সাঃ) অতিরিক্ত ভাঁজের ব্যাপারটা বললেন।
এতে মহানবী (সাঃ) মোটেও খুশি হলেন না। বরং নির্দেশ দিলেন, ‘একে আগের মতই করে দিও, এটা গতকাল আমাকে তাহাজ্জুদ পড়া থেকে বিরত রেখেছে।’ সুতরাং, আমরা বুঝতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরামদায়ক বিছানায় না ঘুমানোর অন্যতম কারণ ছিল, বিছানার অতিরিক্ত উষ্ণতা তাঁকে (সা.) যেন তাহাজ্জুদ সালাত পড়া থেকে বিরত রাখতে না পারে।
একবার কয়েকজন সাহাবী মিলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে তাঁর (সাঃ) জন্য আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আর্জি পেশ করলেন। জবাবে তিনি (সাঃ) বললেন, ‘দুনিয়ার আরাম আয়েশের কী প্রয়োজন? আমি তো একজন পথিকের মত, যে বিরামহীনভাবে চলতে থাকে।
চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে একটু আরামের জন্য গাছের ছায়ায় বসে। কিছুক্ষণ আরাম করে আবার সে চলতে থাকে। তথ্যসূত্র ও টীকা: ১. সীরাহ সংক্রান্ত ড. ইয়াসির কাযির লেকচার, পর্ব-২। ২. শামায়েলে তিরমিযী,অনুচ্ছেদ-৪৬, মাহমুদিয়া লাইব্রেরী। ৩. ১ম ছবিতে দেখা যাচ্ছে— মদিনা জাদুঘরে সংরক্ষিত মহানবী (সাঃ) এর বিছানার মডেল।
৪. ২য় ছবিতে দেখা যাচ্ছে— জেদ্দাহ এর কিছু আলেমের গবেষণা অনুসারে মহানবী (সাঃ) এর বিছানার মডেল। ২য় ছবিতে দুই ধরনের বিছানাই রাখা হয়েছে— ফ্রেমসহ ও ফ্রেম ছাড়া। ফ্রেমের ব্যাপারে সরাসরি কোন সাহীহ হাদীস পাওয়া না গেলেও কোন কোন আলেম অন্য হাদীসের ব্যাখা থেকে এরকম ফ্রেম থাকতে পারে বলে ধারণা করেছেন।
এসএস