মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন
কুমিল্লা জেলা গুগল ম্যাপ থেকে নেওয়া।ছবি-সংগৃহীত
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : কুমিল্লায় এক নারীসহ ৩ জনের করোনা ফলাফল পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে জীবন কৃষ্ণ সাহা নামে একজনের মৃত্যু হওয়ার একদিন পর করোনা পজিটিভ ফলাফল পেয়েছে তাঁর পরিবার। তিনি জেলার দেবিদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামে মৃত মনমোহন সাহার ছেলে।
অপর দুজনের বাড়ি জেলার বুড়িচং উপজেলার জিয়াপুর এবং তিতাস উপজেলার বিরামকান্দি গ্রামে। এদিকে জীবন কৃষ্ণ সাহার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শনিবার বিকালে তার বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করে দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা থেকে শনিবার (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত ৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯টি নেগেটিভ এবং ৬ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। শনিবার ৩ জনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে।
এরমধ্যে বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামে নার্গিস আক্তার (৫৫) নামে এক নারী রয়েছেন। তাঁর মা গত ৫ এপ্রিল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। পরে ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে আসার পর ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার মৃত ওই নারীর দুই নাতির করোনা ফলাফল পজিটিভ আসে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে তিতাস উপজেলার কড়িকান্দি ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের করোনা রিপোর্টও পজিটিভ আসে। শনিবার রাসেল নামে তার এক প্রতিবেশীর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। এদিকে জেলার দেবিদ্বারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন কৃষ্ণ সাহা (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীর নারায়ণগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার ভোরে সে মারা যায়। শনিবার দুপুরে ঢাকার আইইডিসিআর থেকে ওই ব্যবসায়ীর করোনার পজিটিভ ফলাফল আসার পরই তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ তার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়। সে নারায়ণগঞ্জের একটি সুতার ফ্যাক্টরি থেকে বিভিন্ন কোম্পানিতে সুতা সরবরাহের ব্যবসা করতো।
জীবন কৃষ্ণ সাহার স্ত্রীর বড় ভাই তপন সাহা জানান, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে জীবন সাহা গ্রামের বাড়িতে আসে। চলতি মাসের শুরুতেই সে জ্বর-ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু রাতে অবস্থার অবনতি হলে তার বোন (মৃতের স্ত্রী) তাকে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স যোগে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে সেখানে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়।
কিন্তু কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা পজিটিভ রোগী ছাড়া রোগী ভর্তি না করার কথা জানালে ওইদিন রাতে তাকে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকা মেয়ের ভাড়া বাসায় নেয়া হয়। পরে শুক্রবার ভোরে তিনি সেখানে মারা যান। ওইদিন দুপুরে তাকে নারায়ণগঞ্জে সৎকার করা হয়।
তপন সাহা আরও জানান, ‘করোনা আক্রান্ত হলে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে কতোটা হয়রানীর শিকার হতে হয় তা জীবন সাহার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। এতো হাসপাতাল ঘুরেও সে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল, অসহায় হয়ে গেল ৩ কন্যা সন্তান ও স্ত্রী রেখে যাওয়া একটি পরিবার।’
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবীর জানান, গত বৃহস্পতিবার জীবন কৃষ্ণ সাহার করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে শনিবার তার নমুনা রিপোর্ট হাতে পাই। রিপোর্টে করোনা পজিটিভ উল্লেখ করা হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান বলেন, জীবন কৃষ্ণ সাহার বাড়ি ও আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তার বাড়ি এবং ওই এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে।
এসএস