সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
গোয়ালন্দ এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : ঘন কুয়াশা, ফেরি স্বল্পতা ও বিশ্ব ইজতেমার অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
আটকা পড়েছে সহস্রাধিক যানবাহন। এতে করে বুধবার দিনভর চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বুধবার রাত ২টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সাড়ে ৭ ঘণ্টা ফেরিসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া আগামী ১০,১১ ও ১২ জানুয়ারি টঙ্গীতে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বুধবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মুসল্লি ও তাদের বহনকারী শত শত যানবাহন আসতে শুরু করেছে।
এতে করে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ এবং প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি কম থাকায় এ রুটে উভয় পাড়ে ২ সহস্রাধিক ছোট বড় যানবাহন আটকা পড়েছে। এতে করে এ রুটের যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বুধবার বিকাল ৪টা নাগাদ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ উপজেলা কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা যায়। এ ছাড়া গোয়ালন্দ মোড়ে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৫ শতাধিক মালামাল ভর্তি ট্রাক আটকে রাখতে দেখা যায়। পাটুরিয়া প্রান্তেও একইভাবে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।
সরেজমিন আলাপকালে ফরিদপুরের সালতা উপজেলার জামিয়া ইসলামিয়া বাহিরদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি সাইফুল ইসলাম ও মুফতি রহমতুল্লাহ জানান, তারা একটি বাস বোঝাই করে ৪৬ জন মুসল্লি ইজতেমার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। প্রায় ২ ঘণ্টা দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে থাকার পর এখনও ঘাট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে আছি। খাওয়া-দাওয়া, নামাজ ও টয়লেটের খুব সমস্যা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের মোখছেদপুর থেকে আসা আবু সাইদ, বোয়ালমারীর মোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেক মুসল্লি তাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছি। রাস্তায় কিছুটা কষ্ট হলেও আমাদের আর কী করার আছে।
তারা অভিযোগ করেন, এখানে আটকে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে হোটেলে অতিরিক্ত খাবারের দাম রাখা হচ্ছে। অনেকেই হেঁটে ঘাটে পৌঁছাচ্ছেন। আবার অনেকেই রিকশা বা অটোরিকশায় যাচ্ছেন। এদের কাছ থেকে দ্বিগুণ-৩ গুণ হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এগুলো অন্তত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেখতে পারে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, এ রুটে ১৮টি ফেরি থাকলেও বুধবার চলাচল করছিল ৬টি বড় ও ৭টি ছোটসহ মাত্র ১৩টি ফেরি। যান্ত্রীক ত্রুটির কারণে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় এনায়েতপুরী ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান নামের ২টি ফেরি মেরামতে রয়েছে।
এ ছাড়া আমানত শাহ, কেরামত আলী ও খানজাহান আলী নামের ৩টি বড় ফেরি বেশকিছু দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ডর্কইয়ার্ডে মেরামতে আছে। এই ফেরিগুলো দ্রুত সংস্কারে হয়ে আসা দরকার।
অপর দিকে মহাসড়কে দেখা যায়, বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ কয়েক হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকা পড়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় অসহায় যাত্রীরা ৩-৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছাচ্ছেন।
দূরপাল্লার যাত্রীরা যানবাহনের মধ্যেই আটকে থেকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহান। যানজটের সুযোগ নিয়ে অনেক রিকশা, অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করতে দেখা যায়। টয়লেট না থাকায় নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার আবু আবদুল্লাহ রনি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার রাত ২টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া ফেরি কমে যাওয়ায় এবং ইজতেমার বাড়তি গাড়ির কারণে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। তবে দুর্ভোগ কমাতে ইজতেমার গাড়িসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী বাসগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পার করা হচ্ছে।