শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

নোটিশঃ
সারাদেশে ব্যাপী প্রতিনিধি/সংবাদদাতা নিয়োগ চলছে আগ্রহীরা ইমেইলে সিভি পাঠান- ‍admin@dailybdnews360.com  । আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ সবাইকে।
সংবাদ শিরোনামঃ

ক্ষুধার যন্ত্রণায় খেজুর রস চুরি করা সেই ফাতেমা এখন স্বাবলম্বী

                                                             ফাতেমা।ছবি-সংগৃহীত


দৈ‌নিকবি‌ডি‌নিউজ৩৬০ ডেস্ক : অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠেন ফাতেমা। মাত্র ১১ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বিয়ের ১০ বছর পরেই মারা যান স্বামী। এর পর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই তার দিন কেটেছে। সুখের পরিবর্তে দুঃখ ছিল তার সাথী। ক্ষুধার যন্ত্রণা না সইতে পেরে খেজুরগাছের রসও চুরি করে খেয়েছেন তিনি।

এখন বিভিন্ন চাষাবাদসহ বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার বিক্রি করেই স্বাবলম্বী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলাকান্দর গ্রামের ফাতেমা বেগম।

জানা গেছে, বলাকান্দর গ্রামের শিরিষ খালপাড়ার সরকারের খাসজমিতে ঝুপড়িঘরে স্বামী আর সন্তানদের নিয়েই থাকেন তিনি। বড় ছেলে কায়েম আলী এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী আর ছোট মেয়ে তৃপ্তি খাতুন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ফাতেমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানের সফলতার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তার। মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ের পর ১০ বছর পরেই রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যান। এরপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। অনাহারে-অর্ধহারে দিন কেটেছে তার। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর-শাশুড়ি আর দেবরের নির্যাতনে টিকতে না পেরে রাতের আঁধারে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন ফাতেমা।

এর পর বাবার বাড়িতে অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে কেটে যায় পাঁচ বছর। পরে আবার বিয়ে হয় পাশের গ্রাম ষাটবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল হাদির ছেলে ইকবল হোসেনের সঙ্গে। এর পর গ্রামের শিরিষ খালের পাড়ে সরকারি খাসজমিতে টিনের ঝুপড়িঘরে বসবাস শুরু। অভাবের সংসারের মধ্যে মাদকাসক্ত স্বামীর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জীবন, পালাতে চাইলেও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করতে হয়েছে ফাতেমাকে।

এর পর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফাতেমার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ধৈর্য ও সততার সঙ্গে নিজের কর্ম প্রচেষ্টায় এখন সেদিন পাল্টে গেছে তার। বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে ফাতেমা সংসারে সুখ ফিরিয়েছেন।

জানা যায়, ২০০৫ সালে মাত্র একটি চাড়িতে কেঁচো দিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধের পথচলা। এর পর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন তার ৩৫০টি চাড়িতে (মাটির তৈরি বড় পাত্র) কেঁচো কম্পোস্ট কেঁচো দিয়ে শুরু করেন রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার ও কেঁচো বিক্রি করে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে মাঠে প্রায় এক বিঘা জমি কেনা ছাড়াও সাড়ে ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান, গম, সরিষা, গলা, ঝাল, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করে এখন ভালোই চলছে তার সংসার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফাতেমার গ্রামে রয়েছে টিনের ছাউনির একটি লম্বা ঘর। সেখানে সারি সারি বসানো রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক গোবর ভর্তি মাটির চাড়ি। যার ভেতরে ছেড়ে দেয়া রয়েছে লাল রঙের এক জাতীয় কেঁচো। যে কেঁচোগুলো চাড়ির ভেতরে একদিকে বংশ বিস্তার করছে, অন্যদিকে গোবর খাওয়ার পর শুকিয়ে তৈরি হচ্ছে অধিক উর্বর কেঁচো কম্পোস্ট সার, যা ফসলি ক্ষেতে ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ফাতেমা বেগম যুগান্তরকে জানান, রাসায়নিক সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল তা ছাড়া সার দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানান জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া রাসায়নিক সার জমিতে মাত্রাতিরিক্তভাবে ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে।

তিনি জানান, ২০০৫ সালে জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রশিক্ষণশালা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। স্থানীয় মাটির চাড়িগুলোর মধ্যে গোবর দিয়ে এর মধ্যে ছেড়ে দেন এক ধরনের কেঁচো। কেঁচোগুলো গোবর খেয়ে যে পায়খানা করে সেটিই কোঁচো কম্পোস্ট সার।

চাড়িগুলো বসতঘরের পাশের একটি চালা ঘর তৈরি করে বসানো হয়েছে। এর পর থেকে বাড়িতে এ সার তৈরি করে এলাকার কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন।

তিনি জানান, প্রথম দিকে নিজের গরু না থাকায় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গোবর কুড়িয়ে ও কিনে কম্পোস্ট সার তৈরি করতেন। সেই সময় লাভ অনেকটা কম হতো। বর্তমানে তার তিনটি গরু। ফলে বাইরের গোবরের আর প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রতি কেজি সার ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

আর কেঁচো বিক্রি করছেন কেজি এক হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকা। যেখান থেকে প্রতি মাসে তিনি কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার সার ও কেঁচো বিক্রি করতে পারছেন। এ ছাড়া ধান, গম, সরিষা, গলা, ঝাল, লাউসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করছেন, যা দিয়ে এখন ভালোভাবে তার সংসার চলছে। ফাতেমা আরও জানান, বাবার অভাবের সংসার থেকে স্বামীর সংসার পর্যন্ত কখনও অভাব পিছু ছাড়েনি। স্বামীর সংসারে এসে প্রথমে বেশ কিছুদিন হতাশার মধ্যে জীবন চলত। পরে তিনি ভেবেছিলেন নিজে উৎপাদনশীল কোনো কাজ করবেন, যা দিয়ে সংসারের গতি ফেরাতে পারবেন। তার এ ভাবনা অনুসারেই সুযোগ পেয়ে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এর পর নিজ বাড়িতেই শুরু করেন কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ।

প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম জানান, মাঠে ফাতেমার স্বামীর নিজের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। কিন্তু ফাতেমা কয়েক বছর ধরে কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে বর্তমানে বেশ টাকার মালিক হয়েছেন। এক বিঘা জমি কেনা ছাড়াও আরও সাড়ে ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে অর্গানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করছেন ফাতেমা নিজেই।

একসময় সাংসারিক জীবনে তাকে অনেক কষ্ট মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্ত বর্তমানে সংসারে তার একক প্রচেষ্টায় একটি স্বনির্ভর কৃষি পরিবারে পরিণত হয়েছেন।

তিনি জানান, ফাতেমা তার মাদকাসক্ত স্বামীকেও মাদক থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। তার স্বামী এখন কোনো কাজ-কাম না করলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।

গ্রামের আমেনা বেগম জানান, আগে ফাতেমার সংসারে অনেক অভাব ছিল। দুই সন্তান নিয়ে জীবন চলা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু ফাতেমা কৃষিকাজ করার পর থেকে সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি তার সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছে।

গ্রামের মেম্বার আজিজুল ইসলাম বলেন, অবহেলিত নারীদের জন্য ফাতেমা একটি দৃষ্টান্ত। নারীরা আর পিছিয়ে নেই এটি ফাতেমাকে দেখলেই বোঝা যায়।

তিনি বলেন, কেঁচো সার উৎপাদন করে এই নারী যে শুধু স্বাবলম্বী হচ্ছেন তা নয়, পাশাপাশি ধান, গম, সরিষা, কলাসহ বিভিন্ন বেশি ফসল উৎপাদনেও সে ভূমিকা রাখছেন। তবে আমরা ফাতেমার পাশে আছি সবসময়।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, তিনি ফাতেমা বেগমের কৃষি ও কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন পদ্ধতি নিজে দেখেছেন। একজন কিষানির চেষ্টায় শূন্য থেকে সফলতা অর্জন দেশের কৃষক ও কিষানিদের জন্য অনুকরণীয়। যখন দেশের অগণিত কৃষকরা কৃষিকাজে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের জমিতে ব্যবহার মাটির উর্বরা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তখন ফাতেমার জৈব পদ্ধতির চাষাবাদ সবাইকে চমকে দিয়েছে।

ফলে এদিকে যেমন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করে পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে কৃষিকাজে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে।

এসএম

 

সংবাদটি শেয়ার করুন:

আর্কাইভ

SatSunMonTueWedThuFri
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728   
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728    
       
891011121314
22232425262728
293031    
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
       
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
   1234
       
     12
       
  12345
2728     
       
  12345
27282930   
       
28293031   
       
891011121314
29      
       
    123
18192021222324
       
      1
2345678
30      
© All rights reserved © 2019 Dailybdnews360.Com
Design & Developed BY-Dailybdnews360.com
error: কপি করা যাবে না !!