সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
প্রতীকী ছবি
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : চাকরি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করে দেয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিত প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রটি। এ ক্ষেত্রে চাকরির ধরন বুঝে টাকার পরিমাণ কমবেশি হতো। চুক্তি অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন প্রার্থীদের শরীরে ডিভাইস লাগানো হতো- যাতে তারা স্বচ্ছন্দে পরীক্ষা দিতে পারে।
পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ডিভাইসের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দিত প্রার্থীরা। এরপর বাইরে থাকা প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রশ্ন সমাধান করে পাঠাত। আর কৌশলী পরীক্ষার্থী তার কানে লাগানো অতিক্ষুদ্র যন্ত্রে উত্তর শুনে হুবহু উত্তরপত্রে লিখত। এভাবে মেধাবীদের ফাঁকি দিয়ে বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষা ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতো তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের কাছে রিমান্ডে থাকা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাতজন এ তথ্য দিয়েছে। টিমের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকি যুগান্তরকে এ তথ্য জানান।
কাফরুল থানায় করা মামলায় রোববার ৭ জনের প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে ৩০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর কাফরুল ও লালবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের বরাত দিয়ে লাকি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস করার পরপরই চক্রের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রের কাছে দেয়া হতো গণিত ও বিজ্ঞান অংশটি। এ অংশ সমাধান করে দেয়ার বিনিময়ে তিনি পেতেন ৫ হাজার টাকা। বাংলা ও ইংরেজি প্রশ্নের সমাধান করতেন বিসিএস নন ক্যাডার কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদ। চক্রটির হোতাও তিনি। পরীক্ষার আগে ডিভাইস লাগানো এবং পরীক্ষা শেষে খুলে নেয়ার দায়িত্বে ছিলেন নাহিদ।
এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চক্রের অন্য সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত। এডিসি আরও বলেন, রিমান্ডে আসামিরা জড়িত আরও সাত জনের নাম বলেছে। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপরাধীরা প্রফেশনাল জানিয়ে তিনি বলেন, রিমান্ডে থাকা সাত আসামির মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিন-চার বছর ধরে তারা এ কাজ করে চলেছে। এদের কেউ কেউ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেছে। লাকি জানান, চক্রটি অনেক শক্তিশালী। তারা গ্রেফতার ও কারাভোগ নিয়ে চিন্তিত নয়। কারাগারে গেলেও জামিনে বের করে আনার মতো অভিভাবক তাদের রয়েছে- এমন তথ্যও দিয়েছে তারা।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে থাকা আসামিরা হলেন- মাহমুদুল হাসান আজাদ (৩৬), মো. নাহিদ (২৫), রাসেল আলী (২৯), রুহুল আমীন (২৫), খালেকুর রহমান টিটু (২৯), আহমেদ জুবায়ের সাইমন (২৬) ও ইব্রাহিম (২৪)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১২টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ১৬টি মাইক্রো হেডফোন, ১৫টি মোবাইল ফোন, ২৫টি সিম কার্ড, আর্ম ব্যান্ড ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধানের জন্য ব্যবহৃত ৪টি বই জব্দ করা হয়েছিল।
ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া জনতা ব্যাংকের অ্যাসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন এভাবেই ফাঁস করে পরীক্ষার্থীদের উত্তর পাঠিয়েছিল তারা। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর সরবররাহ করত চক্রটির সদস্যরা। মাসুদুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে চক্রটি পরীক্ষার প্রার্থী নির্বাচন, ডিভাইস সরবরাহের প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও সমাধানের প্রক্রিয়া আলোচনা করে।
এসএস