সূত্রমতে, চলতি বছরে অনলাইনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির লক্ষ্য প্রস্তুতকৃত সফটওয়ারে নতুন বিষয়গুলো ইনপুট দেওয়া নিয়ে বদলি কার্যক্রম বিলম্বিত হয় হয়। এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হওয়ার সময়ই অবসরে যান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক। গত শনিবার (৩১ অক্টোবর) অবসরে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আর-হোসেনও। সম্প্রতি অধিদফতরে নতুন মহাপরিচালক এবং রবিবার (১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন নতুন সচিব। এই পরিস্থিতিতে কাজ বুঝে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই আরও এক সপ্তাহ লেগে যাবে। ফলে নভেম্বরে শুরু হচ্ছে না অনলাইনে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম। অন্যদিকে ডিসেম্বরে শিক্ষক বদলি শুরু করা যাবে কিনা তা নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খালিদ আহমেদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত হবে। ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে এই বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। ’ অনলাইনে বদলি কার্যক্রম শুরু করতে নীতিমালা সংশোধন জরুরি কিনা জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘অনলাইনে শিক্ষক বদলি শুরু করতে নীতিমালা এখনই সংশোধন করার প্রয়োজন হবে না।’ নভেম্বরে বা ডিসেম্বরে অনলাইন শিক্ষক বদলি শুরু করা হবে কিনা জানতে চাইলে খালিদ আহমেদ বলেন, ‘এটি এখনই জানানো সম্ভব নয়। ’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের হয়রানি ও বদলি কার্যক্রম দুর্নীতিমুক্ত করতে এ বছর অক্টোবর থেকে অনলাইনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি শুরু করার ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে যায়। তবে অক্টোবরেই সফটওয়ার ট্রায়াল শেষ করে বদলি কার্যক্রম শুরু করতে নতুন বিষয় ইনপুট দেওয়ার কাজও শুরু করে অধিদফতর। কিন্তু এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন অবসরে চলেন যান। ফলে এই বদলি কার্যক্রম এ বছর শুরু করা যাবে কিনা না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
তবে জানুয়ারিতে অনলাইন বদলি শুরু করা সম্ভব বলে জানান মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যদিও অনলাইন বদলি জানুয়ারিতে শুরু না হয় সেক্ষেত্রে হার্ড কপিতে ফেব্রুয়ারিতে প্রচলিত নিয়মে বদলি কার্যক্রম চলবে। অনলাইনে বদলি কার্যক্রম শুরু হলে সারাবছরই বদলি কার্যক্রম চলবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন এই বদলি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী, গুরুতর অসুস্থ ও বিবাহ বিচ্ছেদ বা বিধবা নারী শিক্ষকরা, স্বামী/স্ত্রী বা সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বিষয়গুলোর জন্য নতুন অপশন যুক্ত করার কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব ও সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত অনলাইন শিক্ষক বদলি কার্যক্রম শুরু হোক। আর যেন শিক্ষকদের বদলির জন্য দালালের কাছে যেতে না হয়। আগে শিক্ষকদের অর্থ ব্যয় হতো, হয়রানি হতে হতো। অনলাইনে বদলিতে তেমনটি থাকবে না।’
উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদলি কার্যক্রম জানুয়ারিতে শুরু হয়ে চলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিবছর এই বদলি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বদলির সময় অধিদফতরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দালালরা শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগে থেকেই অনলাইনে শিক্ষক বদলির উদ্যোগ নেয়।
এসএস