সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
সামনের অংশে গড়ে তোলেন পৌর আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়। এরপর পেছনে পর্যায়ক্রমে ২৫টি স্টল (দোকান) গড়ে তোলেন তিনি। দোকান নির্মাণ শেষ হলে পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি গুঁড়িয়ে দিয়ে সব স্টল উন্মুক্ত করেন।
এভাবেই ব্যক্তিমালিকানাধীন ওই জমি দখলে নেন আবদুল বারেক মোল্লা। শুধু তাই নয়, এসব দোকান ভাড়া দিয়ে অগ্রিম হিসেবে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা নিয়েছেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর মেয়রকে এ কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয়ভাবে ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত শাহ জালাল খান। অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র যুগান্তরের কাছে দাবি করেছেন, ওই জমি তার ভাতিজার। তবে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।জমি মালিকের ছেলে আবু ইউছুফ তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, ১৯৭০ সালে আমার বাবা লাল মিয়া তালুকদার ওই জমি আবদুল আলী, ওয়াজেদ আলী, ছোমেদ আলী ও সেকান্দার আলী গংয়ের কাছ থেকে ২২৭০ নং দলিলমূলে কেনেন। এসএ খতিয়ানে দাগ নম্বর ১২২৭ (বিএস ১২০৭)। এরপর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জমিটি আমাদের ভোগদখলে ছিল। এ সংক্রান্ত কাগজপত্রও তারা যুগান্তরকে দেখান।
আবু ইউছুফ বলেন, ২০১১ সালে আবদুল বারেক মোল্লা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণের কথা বলে তার বাহিনী নিয়ে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেন। এ সময় আমরা (লাল মিয়ার ছেলেরা) স্থানীয়ভাবে ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে সালিশের মাধ্যমে জমিটি উদ্ধারের চেষ্টা করি। তখন মেয়র আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও জামিন-অযোগ্য মামলার হুমকি দেন। সেখানে পৌর আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ও গড়ে তোলা হয়। পরে অনেক চেষ্টা করেও আমরা আর জমিটি দখলে নিতে পারিনি।
একই অভিযোগ করেন লাল মিয়ার আরেক ছেলে মো. সাখাওয়াত তালুকদারও। তিনি বলেন, আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি-সংবলিত একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে ওই জমি দখলে নেন আবদুল বারেক মোল্লা ও শাহ জালাল খান। দলের অস্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ ছাড়াও সেখানে সানরাইজ নামে একটি আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেন তারা। এখন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙে সেখানে ২৫টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।
বুধবার ওই জমিতে গেলে দেখা যায়, সেখানে ২৫টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। স্টলগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে বিভিন্নজনের কাছে। পাশে মাটিতে পড়ে আছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড। এ সময় ছবি তুলতে গেলে মেয়রের ক্যাডার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য এসে কোনোমতে সাইনবোর্ডটি এক স্থানে লাগিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায়।
কথা হয় স্টল বরাদ্দ নেয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা দুটি স্টলের জন্য অগ্রিম বাবদ ছয় লাখ নিয়েছেন। মিলন নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, একটি স্টলের জন্য ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। জাকারিয়া, আবদুল সালাম, জালাল, বেলাল মাঝি, লোকমান, নিজাম বেপারিসহ কয়েকজন জানান, দোকান বরাদ্দের জন্য ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন মেয়র।পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর শাহ আলম বলেন, দলীয় কার্যালয় ভেঙে দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত সাইনবোর্ড মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সানরাইজ হোটেলের স্বত্বাধিকারী শাহ জালাল মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি কুয়াকাটায় নাই। শুনেছি আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙে স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি দলীয় কার্যালয় ভাঙার ক্ষমতা রাখি না, ওটা মেয়রের কাজ। তবে ওই দাগ-খতিয়ানে আমারও জমি রয়েছে।’ জানতে চাইলে জমি দখল ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, ওই সম্পত্তি আমার ভাতিজা বেলাল মোল্লার। পটুয়াখালীর প্রয়াত মিলন কমিশনারের কাছ থেকে ওই জমি কেনা হয়েছিল। তিনি (মিলন) মারা যাওয়ায় এখন কাগজপত্র দেখানো সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতাকে দিয়ে ফোনে এ সংক্রান্ত সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।