মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
পরিবহনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি।ছবি-সংগৃহীত
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : রাজশাহী মহানগরীর মোড়ে মোড়ে পরিবহনে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় চলছে। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় শ্রমিক সংগঠনের নামে সশস্ত্র লোকজন চাঁদাবাজি করছে। ভীত সন্ত্রস্ত ট্রাকসহ মালামাল পরিবহনে সংশ্লিষ্টরা তাদের চাহিদামত চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকরা পরিহনের ভাড়া বৃদ্ধিতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের পর মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি শুরু হয়। চাঁদাবাজরা ট্রাকের পাশাপাশি ভুটভুটি, ছোট হলুদ মিনি ভ্যান, কুরিয়ার সার্ভিসের ভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কাভার্ডভ্যানের মতো প্রায় দুই থেকে তিন হাজার পরিবহনে প্রতিদিন জোরপূর্বক ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার পশ্চিমপ্রান্ত কাশিয়াডাঙ্গার প্রবেশপথ থেকে শুরু করে নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক, আম চত্বর সংলগ্ন বিআরটিএ এর সামনের সড়ক, শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক ও তালাইমারি হয়ে মহানগরীর পূর্বপ্রান্তের প্রবেশপথ কাটাখালি পর্যন্ত অন্তত ছয়টি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে প্রাকাশ্যে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন থেকে প্রকাশ্যে অবৈধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অথচ চাঁদা আদায়ের সংশ্লিষ্ট উল্লেখিত স্পটগুলোর একশ থেকে দুইশ গজের মধ্যেই রয়েছে ট্রাফিক চেকপোস্ট অথবা পুলিশ বক্স।
সূত্র জানায়, মহানগরীর পশ্চিমপ্রান্তের প্রবেশপথে চাঁপইনবাবগঞ্জের দিক থেকে পণ্যবাহী যেসব গাড়িই আসছে সেই গাড়ির চালকের কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। সংশ্লিষ্টদের দাবি টার্মিনাল ফিসহ রাজশাহী জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ব্যবস্থাপনায় নির্মিত ট্রাক টার্মিনালটি বৈধভাবে ইজারা নিয়েছেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা কামাল হোসেন রবি। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ বছরের জন্য নওদাপাড়ায় অবস্থিত ওই টার্মিনালটি তিনি ইজারা নিয়েছেন। ইজারার শর্ত অনুসারে শুধুমাত্র ওই ট্রাক টার্মিনালে প্রবেশ করা ট্রাক থেকেই টার্মিনাল ফি হিসেবে ৫০ টাকা আদায় করা যাবে। তবে কয়েক দিন বসে থেকেও ট্রাক টার্মিনালের ভেতরে কোনো ফি বা টোল আদায় করতে দেখা যায়নি।
তবে মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে দেখা গেছে, আট থেকে ১০ জনের গ্রুপের লোকজন যুবক মোড়গুলোতে প্রকাশ্যে লাঠিসোটা নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা মালামাল পরিবহনের ট্রাকসহ প্রায় সবধরণের ছোট বড় যানবান থেকে আদায় করছে চাঁদা। কোনো চালক চাঁদা না দিলে সেই যানবাহকে ধাওয়া করে ভাঙচুরের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। তবে সশস্ত্র ব্যক্তিরা চালককে চাঁদা আদায়ের রশিদ দিচ্ছে দুই টাকার।
এ ব্যাপারে মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনালের ইজারাদার কামাল হোসেন রবি অবশ্য দাবি করেন, উল্লেখিত পয়েন্টে চাঁদাবাজির সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি বৈধভাবে আরডিএর কাছ থেকে ট্রাক টার্মিনালটি ইজারা নিয়েছেন। তার লোকেরা শুধুমাত্র ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়কে টোল আদায় করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, অন্যান্য সড়ক ও মোড়ের টোল আদায় পয়েন্টে অবৈধভাবে তার বৈধ ইজারার রশিদ ব্যবহার করা হচ্ছে। যা অবৈধ, তিনি নিজেও এই চাঁদাবাজির প্রতিকার দাবি করেন।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর মোড়ে মোড়ে প্রাকাশ্যে চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার অনির্বাণ চাকমার মোবাইলে কল করা হয়। কিন্তু তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ফোনের লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এসএস