শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : পাঁচ বছর আগেও লাভজনক ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) প্রতিষ্ঠানগুলো। সংস্থার ১২টি কারখানায় সার, সিমেন্ট, কাগজ, স্যানিটারি পণ্য ও গ্লাস উৎপাদন করে শেষ পর্যন্ত এক-দুশ কোটি টাকা লাভ থাকতো। সেই প্রতিষ্ঠানই এখন বছরে হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে।
তথ্য বলছে, গত অর্থবছর বিসিআইসির ১০টি প্রতিষ্ঠান লোকসান করেছে। একটি প্রতিষ্ঠান লাভজনক; আরেকটি প্রতিষ্ঠান লোকসানও নয় লাভও নয় এমন পরিস্থিতিতে চলছে। এর মধ্যে বিসিআইসির আটটি সার কারখানার ছয়টিই লোকসানি। এছাড়া লোকসান হয়েছে সিমেন্ট, কাগজ, স্যানিটারি পণ্য ও গ্লাস উৎপাদনের পৃথক চারটি কারখানায়।
আলোচিত সময়ে শুধু টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড সার উৎপাদনে ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা লাভ করেছে। ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানির লাভ-লোকসান সমান ছিল।
তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) মে মাস পর্যন্ত এসব কারখানায় লোকসান হয়েছে ৮১৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে পুরো অর্থবছরের তথ্য এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। পুরো বছরে এ লোকসানের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণও বিসিআইসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এদিকে সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লাভজনক ছিল সংস্থাটি। ওই বছর ৯৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এর পরের বছর লোকসান হয় ৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এরপর থেকে লোকসান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
শেষ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি লোকসান করেছে শাহজালাল ফার্টিলাইজার। মে মাস পর্যন্ত ২৬৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা লোকসান করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ১৭৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড ১৪৫ কোটি ৬৩ লাখ, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি ৭১ কোটি ৭৫ লাখ, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি ৬২ কোটি ২৬ লাখ, পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা লোকসান করে।
অন্যদিকে একই সময়ে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি ৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, কর্ণফুলী পেপার মিল ২০ কোটি ১৩ লাখ, বাংলাদেশ ইন্সুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি ১৯ কোটি ১৭ লাখ এবং উসমানীয় গ্লাস ফ্যাক্টরি ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে।
সার্বিকভাবে ক্রমবর্ধমান এ লোকসানের কারণ হিসেবে বিসিআইসির কারখানাগুলোর বেশি বয়স, দক্ষ জনবলের অভাব, চলতি মূলধনের ঘাটতি, কারখানা সংস্কারের অভাব ও আধুনিকায়ন বা বিএমআরই (ব্যালান্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার ও প্রতিস্থাপন) না করাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বেতন বৃদ্ধি এবং উৎপাদন উপকরণ ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন অনেকে। পাশাপাশি রয়েছে অদক্ষ সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতির অভিযোগও।
সংস্থাটির পরিচালক (বাণিজ্যিক) ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আমিন উল আহসান বিসিআইসির লোকসানের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখেন ‘ট্রেডিং গ্যাপ’কে। তিনি বলেন, ‘কৃষককে স্বল্পমূল্যে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের নেয়া উদ্যোগের সহায়তা করছে বিসিআইসি। এ কারণে প্রতি টন সার গড়ে ২২ হাজার টাকায় উৎপাদন করে ১৪ হাজার টাকায় সরবরাহ করছি। এটি লোকসানের বড় কারণ।’
আমিন উল আহসান আরও বলেন, ‘প্রতি বছর বিসিআইসি আট থেকে নয় লাখ টন সার সরবরাহ করছে ন্যায্যমূল্যে। এ প্রতিষ্ঠান কৃষিতে বড় ভূমিকা রাখছে। এটি একটি সর্বসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান। আমরা সরকারের জন্য কাজ করছি। যোগ-বিয়োগ করে দেখলে বিসিআইসি কখনো লোকসান করছে না। তারপরও আমরা আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে এ লোকসান কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
যদিও বিসিআইসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, আগের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের অদক্ষতা, গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই ডুবছে বিসিআইসি এবং এর অধীনের প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে হতাশায় আছেন এখানকার আট হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জানা গেছে, বর্তমানে সংস্থাটির তিনটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। এর মধ্যে আশুগঞ্জ কারখানায় মোটর রুমে আগুনে কারখানাটি বন্ধ। যদিও সমস্যা সেরে এ বছর চালু করা হয়েছিল কারখানাটি; তবে গত সপ্তাহে আবার ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট সার কারখানায় অ্যামোনিয়া ট্যাংকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। কারখানার সংস্কারের অভাব ও আধুনিকায়নের কারণে বন্ধ রয়েছে উসমানিয়া গ্লাস, যা চালু হতে আরও দুই-চার মাস সময় লাগবে।
এছাড়া বর্তমানে চালু থাকলেও গত বছর প্রায় পুরো সময় বন্ধ ছিল যমুনা ফার্টিলাইজার। সেখানে মোটর ব্লাস্ট হয়ে গত দেড় বছর বন্ধ থাকার পর নভেম্বরে চালু হয়েছে সার কারখানাটি।
এসএস