তাদের দাবির মুখেই পুলিশের হাত থেকে মামলার তদন্তভার গেছে সিবিআইয়ের হাতে। চলছে সন্দেহভাজন ও মামলায় ভূমিকা আছে এমন ব্যক্তিদের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। এখনো দায়ী করার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাটি।
কিন্তু এবার বোমা ফাটালেন সুশান্তের ম্যানেজার শ্রুতি মোদির আইনজীবী। তিনি জানান, রিয়াকে ফাঁসাতে মিথ্যা বলছে সুশান্তের বাবা ও দিদিরা। তারা নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে অন্যের কাঁধে দোষ দিয়ে। সুশান্তের হতাশার পেছনে তার পরিবারেরই ভূমিকা কম নয়।
শ্রুতি মোদির উকিল অশোক সারাওগি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক ক্রমশই অবনতি হচ্ছিল। এক রাতে তিন দিদির সঙ্গে নাকি ঝামেলা হয়েছিল সুশান্তের। জল এতদূর গড়ায় যে শেষ পর্যন্ত নাকি সুশান্তকেই ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে! সংবাদমাধ্যমে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সুশান্তের সাবেক ম্যানেজার শ্রুতি মোদী। শ্রুতিকে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। সুশান্তকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকেও।
আইনজীবী অশোক সারাওগি সংবাদমাধ্যমকে আরও বলেন, ‘রিয়া আসার পর থেকেই যে সুশান্ত মাদক নেন এ কথা ভুল। আমার মক্কেল তাকে কাছ থেকে দেখেছে। সোহেল সাগর, সুশান্তের প্রাক্তন দেহরক্ষী এবং চালকই তাকে মাদকের সন্ধান এনে দিতেন।’
তার বিস্ফোরক মন্তব্য, সোহেল এবং তার আরও দুই বন্ধু আয়ুশ, আনন্দী ও সুশান্ত মিলে সুশান্তের বাড়িতেই একসঙ্গে মাদক সেবন করতেন। তার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই পার্টির আয়োজন করা হতো, যেখানে উপস্থিত থাকতেন সুশান্তের দিদিরাও। অশোকের প্রশ্ন, ওই সব পার্টিতেও তো মাদক সেবন করা হতো। তখন কি তার দিদিরা সে ব্যাপারে কিছু আঁচ পাননি? সুশান্তের এক দিদি মদে আসক্ত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথাও প্রকাশ্যে এনেছেন অশোক। তিনি জানান, মাঝে মধ্যেই নাকি সেই গ্রুপে একে ৪৭ (মাদকের সাঙ্কেতিক নাম) নিয়ে আলোচনা হতো। সুশান্ত এবং রিয়াসহ ওই গ্রুপে যারা ছিলেন তারা সবাই কোনও না কোনও সময় মাদক নিয়েছেন বলে জানান অশোক।
এর আগে রিয়া একাধিক সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, সুশান্তের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্কের নাকি ক্রমশ অবনতি ঘটছিল। একই সুর শোনা গেল এবার শ্রুতির গলায়ও। শ্রুতির হয়ে তার আইনজীবী বলেন, ‘গত বছর নভেম্বরে সুশান্তের তিন বোন তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। কিন্তু নভেম্বরের ২৭ তারিখ রাতে সম্ভবত ভাই বোনের মধ্যে জোর ঝামেলা হয়। সুশান্তের দিদিরা তার বাড়ি ছেড়ে পাশেই ললিত হোটেলে চলে যান। সুশান্তও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে খার-এর হিন্দুজা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।’
সে সময় অভিনেতার বাবা তাকে ফোন করলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন। সুশান্তের বক্তব্য ছিল, ‘দিদিদের সঙ্গে কথা বলেই যদি এই অবস্থা হয় তো বাবার সঙ্গে কথা বললে কী হবে?’
এদিকে সুশান্তের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল বলে দিন কয়েক আগে এক ভিডিও শেয়ার করে বার্তা দিয়েছেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা। তিনি আরও বলেন, ‘রিয়া সব মিথ্যা বলছে’। কিন্তু এবার সুশান্তের ম্যানেজার যা বলছেন তাতে রিয়ার কথাই সত্যি মনে হয় আর সুশান্তের বাবা-দিদিদের কথা নিয়ে বাড়ছে সন্দেহ।
এমনকি টাকা-পয়সা নিয়েও রিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন শ্রুতি মোদি। তিনি গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার যে অভিযোগ রিয়ার বিরুদ্ধে তার পরিবার করেছে তা সঠিক নয়। কারণ শ্রুতির মতে সুশান্তের অ্যাকাউন্টে, ফিক্সড ডিপোজিট মিলিয়ে ৮ কোটি টাকার মতো ছিল। যার মধ্যে বেশিরভাগেরই নমিনি ছিলেন সুশান্তের দিদি প্রিয়াঙ্কা। এই দিদিকে খানিকটা পছন্দ করতেন সুশান্ত। বিশ্বাসও করতেন।
এই প্রিয়াঙ্কা সুশান্তের ওষুধও বদলে দিয়েছিলেন কোনো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই। সে নিয়েই ৮ জুন ঝগড়া করে সুশান্তের ফ্ল্যাট থেকে চলে যান রিয়া। এ বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, সুশান্ত এবং তার দিদি প্রিয়াঙ্কার চ্যাট থেকে জানা যায়, ৮ জুন প্রিয়াঙ্কার দিদি তার ভাইকে লিব্রিয়াম, নেক্সিটো ১০ এবং লোনাজেপ নামে তিনটি ওষুধ খেতে বলেন। সুশান্ত জানান, প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই সব ওষুধ পাওয়া যাবে না। তখন প্রিয়াঙ্কা সুশান্তকে বলেন, তার এক বন্ধু ডা. প্রেসক্রিপশন তৈরি করে দেবে। পাশপাশি এ-ও জানান, মুম্বাইয়ের অন্য ডাক্তারের সঙ্গেও যোগাযোগ করিয়ে দেবেন প্রিয়াঙ্কার সেই বন্ধু। প্রিয়াঙ্কা লেখেন, সব গোপনই থাকবে।
এর পরই সুশান্তকে প্রেসক্রিপশনের অ্যাটাচমেন্ট পাঠান প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে লেখেন, যদি কেউ বলে দিল্লির প্রেসক্রিপশন কেন তা হলে বোলো, অনলাইন কনসাল্টেশন।
যে তিনটি ওষুধ প্রিয়াঙ্কা তার ভাইকে নিতে বলেছিলেন তার মধ্যে লিব্রিয়াম হচ্ছে হিপ্নোটিক মেডিসিন যা অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা এবং মদ ও অন্যান্য মাদকের আসক্তি কাটাতে ব্যবহার করা হয়। নেক্সিটো ১০ প্যানিক ডিজঅর্ডার কাটাতে ব্যবহার করা হয়। লোনাজেপ সাধারণত মৃগীর ওষুধ। রিয়ার আইনজীবীর প্রশ্ন, প্রথম থেকেই যে তারা বলে এসেছিলেন সুশান্তের অসুখ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না তাদের, তবে কেন সুশান্তকে এ ধরনের ওষুধ খেতে বলেন তার দিদি? তিনি বলেন, রিয়া যদি ওষুধ দিয়ে থাকেন তার দিদিও তো দিয়েছেন। তবে সে কথা চেপে গেলেন কেন তারা?