স্টাফ রিপোর্টার: সাভারে চায়ের দোকানের গরম পানিতে আহতের ঘটনাকে পুজি করে এসিড নিক্ষেপের সাজানো মামলায় আসামী হয়ে গ্রাম ছাড়া নিরীহ মানুষ। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং লাগাতে তৎপর একটি মহল। ভালো করে খতিয়ে না দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি বেশ অপপ্রচার হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানাযায় সাভারের প্রত্যন্ত অঞ্চল ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসি কলাতিয়া পাড়া গ্রাম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়ীবাধ সংলগ্ন গ্রামটির অবস্থান। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এলাকায় জায়গা জমির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গ্রামটিতে জমি নিয়ে বিরোধ ও দখল বেদখলের ঘটনা অসংখ্য। এমনই একটি ঘটনায় শ্যামলাশি বাহের চর গ্রামের ৩১ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল শ্যামলাসি বাহের চরের আসলাম গংয়ের সাথে কলাতিয়া পাড়ার মৃত আহমেদ আলী মাদবরের পুত্র সেলিম ও নাজিরের সাথে। নাজির ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জায়গা জমি ব্যবসায়ে জড়িত এবং প্রভাবশালীরা তার ব্যবসার অংশীদার। বিরোধীয় সম্পত্তির মূল্য ৩কোটি টাকার উপরে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানাযায়, ঘটনার দিন গত ৭ আগষ্ট দুপুরে মিমাংসার কথা বলে কলাতিয়া পাড়ার শাহীনের মাধ্যমে আসলামের ব্যবসায়িক অংশীদার রায়হানকে ডেকে নেয়া হয়। রায়হান তার এক বন্ধুকে নিয়ে ঘটনাস্থল সেলিম মাদবর মার্কেটের সামনে উপস্থিত হলে তর্ক বিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সেলিম সড়ক সংলগ্ন মার্কেটের চায়ের দোকান হতে গরম পানির কেতলি হাতে নিয়ে রায়হান ও তার বন্ধুকে মারতে যায়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে তারা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ারকালে কেতলি উপর করে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপের চেষ্টাকালে গরম পানি সেলিমের ভাই নাজিরের পেট ও হাতসহ কয়েক স্থানে লেগে ফোসকা পড়ে। কেতলি উপরে তোলার সময়ে সেলিমের ডান হাতের বাহুতেও লেগে সামন্য পুড়ে যায়। ঘটনার পর নাজিরকে স্থানীয় একটি ওষুধের ফার্মেসী হতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং পরে তিনি প্রায় ঘন্টা ব্যাপী স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন ও ছবি তুলেন। পরবর্তীতে এ ঘটনাকে পুজি করে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি নাজির ও তার ভাই সেলিমকে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হয়।
৮ আগষ্ট তাদের আরেক ভাই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় এসিড নিক্ষেপে আহতের ঘটনা উল্লেখ করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পাশ্ববর্তী শ্যামলাসি বাহের চর গ্রামের প্রতিপক্ষ আসলাম (৩৫),আশরাফ (৩৮),মামুন (৩৯) সোলায়মান (২৭) কেরানীগঞ্জের চর ওয়াসপুরের দুই ভাই এনামুল (৪৬) ও রায়হান (৪০) বিরোধীয় জায়গার কেয়ারটেকারের ছেলে ট্রাক হেলপার আশিককে (২৫) আসামী করা হয়। ঘটনার সময় বেলা ৩টা ১৫মিনিট উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আলাপ করলে ঘটনারকালে ২ নম্বর আসামী আশরাফ শ্যামলাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন মর্মে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল মোমিন। আসামী আশিকের পিতা মাতা দাবি করে বলেন তার ছেলে ট্রাক হেলপারের কাজ করে। ঘটনার সময়ে সে ভাকুর্তার একটি খোলা থেকে ইট নিয়ে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় ছিলেন এবং মামলায় তাদের ছেলের বয়স ২৫ বছর উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে ২০ বছরের নীচে। এ বিষয়ে কথা বললে ভাকুর্তা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী আবদুল বাতেন জানান বিষয়টি সম্পূর্ন রাজনৈতি বিষয়। আসামীরা সবাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজনৈতিক বিরোধের কারনে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতির শরীরে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান সংশ্লিষ্ট ঘটনায় আহত নাজিরের পরিধেয় পোষাকসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। এসিড না গরম পানি তা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
রিপোর্ট পাওয়ার পর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। কে এই নাজির ও সেলিম শ্যামলাসি কলাতিয়া পাড়ার মৃত আহমেদ আলীর ৭ পুত্রের অন্যতম নাজির ও সেলিম।২০১০ সালে প্রতিবেশী আলেফা বেগম (৭০) ও তার নাতি ফারজানা (৮) হত্যা মামলার প্রধান আসামী সেলিম।এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে ৮ মাস হাজত বাস করে জামিনে এসে আলেফার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সেলিম। এক পর্যায়ে আলেফার সন্তানরা তাদের বসত বাড়ী সেলিমের পরিবারের কাছে নাম মাত্র মূল্যে বিক্রয় করে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন।
প্রতিবেশী ইউসুফের ছেলে দ্বীন ইসলাম নিখোজ প্রায় ৫ বছর। পরিবারের সদস্যরা অনেক সন্ধান করে হদিস পায়নি দ্বীন ইসলামের। ৬০ বছরের বৃদ্ধ ইউসুফের পরিবার জানান এ ঘটনায় সন্দেহের তীর সেলিমের দিকে। নিজের নামে সেলিম মাদবর মার্কেট বানিয়েছেন সেলিম। এ জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। জায়গাটির কেয়ারটেকার নুর মোহাম্মদ গোয়ালকে মারধর করে বের করে দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতারতি দোকান পাট গড়ে তুলে নাম দেয়া হয়েছে সেলিম মাদবর মার্কেট। ইতোমধ্যে গ্রামের আবদুর রহিম,বিল্লাল হোসেন,করম আলীর জায়গা জোরপূর্বক দখল করেছে এ দুই ভাই চক্র। আসলাম গং ও জুলহাস মিয়ার জায়গা দখলে নেয়ার জন্য নানাভাবে পায়তারা করছে চক্রটি।
২০১৪ সালে শ্যামলাসি বাহের চর গ্রামের দুদু মার্কেটের জয়নালের চায়ের দোকান থেকে গরম পানির কেতলি জয়নালের ছেলের গায়ে নিক্ষেপ করেন নাজির। তাদের আরেক ভাই ইমরান ধর্ষন মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দিন হাজত বাস করেন।