মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : ভারতীয় সৈন্যরা বহুল বিতর্কিত লাদাখের বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করে টহলরত চীনা সৈন্যদের সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। সোমবার লাদাখের প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ তীরে এ ঘটনা ঘটেছে।
চীনের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, চীনা সৈন্যরা পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, সেটি পরিষ্কার করা হয়নি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা ভেঙে ৪৫ বছর পর চীন-ভারতের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে প্রথমবারের মতো গুলির ঘটনা ঘটেছে।
গত কয়েক মাস ধরে প্রতিবেশি এ দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে দেশটির সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র ঝ্যাং শুইলি বলছে, লাদাখের প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ তীরের কাছে শিনপ্যাও পার্বত্য অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) অবৈধভাবে অতিক্রম করেছে ভারতীয় সৈন্যরা।
তিনি বলেন, ভারতের এই পদক্ষেপ দুই পক্ষের পৌঁছানো সমঝোতার গুরুতর লঙ্ঘন, এই অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে…এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে আমরা ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি।
তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত চীনের এই অভিযোগের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি।
গত জুন থেকে লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিতর্কিত এই সীমান্তে চীনা-ভারতীয় সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয় গত ১৫ জুন। ওইদিন হাতাহাতি, কিল-ঘুষি লাথিতে ভারতের অন্তত ২০ সৈন্য নিহত হয়।
কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম প্রাণঘাতী এই সংঘাতে চীনা সৈন্যরাও হতাহত হয়েছেন বলে দাবি করে ভারত। যদিও বেইজিং এ ব্যাপারে কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।
হিমালয় অঞ্চলে প্রতিবেশি দুই দেশের সীমান্ত বিরোধ কয়েক দশক ধরে চলে এলেও কোনও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি বেইজিং-দিল্লি। গত জুনের ওই সংঘাতের পর থেকে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও উত্তেজনা কমেনি; বরং সময়ে সময়ে উত্তেজনায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।
জুনে কী ঘটেছিল?
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মিটার ওপরের লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সৈন্যদের সংঘাত হয় জুনে। এ সময় চীনা সৈন্যদের কিল-ঘুষি, লাঠির আঘাতে বিশাল উচ্চতা থেকে গালওয়ান নদীতে পড়ে যান ভারতীয় সৈন্যরা।
এতে ২০ ভারতীয় সৈন্যের প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হন আরও প্রায় ৭৬ জন। তবে সংঘাতে চীনা কোনও সৈন্য হতাহত হয়েছে কিনা বেইজিং সেব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
১৯৯৬ সালে দ্বিপাক্ষিক এক চুক্তির মাধ্যমে উপত্যকায় অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে রাজি হয় উভয় দেশ। কোনও ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ছাড়া সংঘর্ষে এতসংখ্যক ভারতীয় সৈন্যের প্রাণহানি গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম।
সৈন্যদের সংঘাত কেন?
দুই দেশের মাঝে বিবাদমান সীমান্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) হিসেবে পরিচিত। নদী, হ্রদ এবং প্রবল তুষারপাতের কারণে এই সীমান্ত এলাকা একদিক থেকে অন্যদিকে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুই সেনাবাহিনীর দেশের সৈন্যদের উপস্থিতি রয়েছে সীমান্তের উভয় পাশেই। সীমান্তের অনেক এলাকায় মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে সৈন্যরা। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীন হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত।
শুধু তাই নয়, ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা চীন দখলে নিয়েছে বলেও অভিযোগ নয়াদিল্লির। গত তিন দশকে উভয় দেশের মাঝে দফায় দফায় আলোচনা হলেও সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কোনও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি কেউই।
এ দুই দেশের মাঝে মাত্র একবারই যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৬২ সালে; সেই যুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।
তবে বর্তমানে দেশ দুটির মাঝে ক্রমবর্ধমান হারে উত্তেজনা বৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত দুই দেশ সীমান্ত উত্তেজনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে।
ভারত লাদাখ অঞ্চলে নতুন একটি সড়ক তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যন্ত প্রত্যন্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কোনও ধরনের সংঘাত তৈরি হলে ভারত এই সড়ক ব্যবহার করে দ্রুত সেখানে সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করতে পারবে।
এতে সীমান্তে ভারতের সক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। সীমান্তে ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপ চীনকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।