রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন
আশুলিয়ায় ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ’ নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বেলাল চৌধুরী ওরফে বি. চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বি. চৌধুরী “জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ” নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পরিচয়ে ওই এলাকায় নানা অপকর্ম চালাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বেলাল হোসেন চৌধুরী নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। তিনি তার পরিবারসহ পাথালিয়া ইউনিয়নে বসবাস করছেন।
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার শিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হলের নিরাপত্তা কর্মী কাঞ্চন বলেন, আমার ভাগনি জামাইকে তৃতীয় শ্রেণীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় বেলাল চৌধুরী। প্রথমে ২ লাখ টাকা ও নিয়োগপত্র পাওয়ার পরে বাকি ৪ লাখ টাকা পরিশোধের কথা ছিল। পরে আমি ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা তুলে দেই। কিছুদিন অতিবাহিত হলে তিনি জানান, বাকি ৪ লাখ টাকাও আগেই পরিশোধ করতে হবে। এই ৪ লাখ টাকা না দিলে নিয়োগ হবে না। পরে বাধ্য হয়ে আরও ৪ লাখ টাকা আমি তাকে দিয়ে দেই। এরপর থেকে বেলাল নানাভাবে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি টাকা ও চাকরি কিছুই দেন না। পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে আমাকে ১ লাখ টাকা ও বাকি টাকার চেক প্রদান করেন। বাকি টাকা পরিশোধ করে চেক ফেরত নেবেন বলে সকলের সম্মুখে কথা দেন তিনি। কিন্তু টাকা পরিশোধ করে চেক ফেরত নেওয়ার তারিখ আসলে তিনি সব কিছু অস্বীকার করেন। এখন ওই টাকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
একই প্রতারণার শিকার অপর হলের নিরাপত্তা কর্মী মনির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে তৃতীয় শ্রেণীর একটা চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিল। গত দুই বছর ধরেই তিনি ১০ তারিখ ২০ তারিখ বলে সময় ক্ষেপণ করছেন। কিন্তু চাকরি কিংবা টাকা কিছুই দিচ্ছেন না। পরে স্থানীয়ভাবে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশি হয়। সেখানে ঈদুল ফিতরে আগে ২৬ রমজানে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তিনি ১ লাখ টাকা দিয়ে আবার ঈদুল আযহার আগে বাকি টাকা দেওয়ার সময় নেন। ঈদুল আযহার আগে আর টাকাটা দেয়নি। পরে বাকি টাকাটা চাইতে গেলে বি. চৌধুরী নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেন। তিনি শেনওয়ালিয়া এলাকায় থাকেন। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ নামে একটা সংগঠন করেছেন। এ সংগঠনের আড়ালে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
চাঁদার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক সেনা সদস্য বলেন, আমি বি চৌধুরীর বড় ভাই কে চৌধুরীর ওরফে কামাল চৌধুরীর মাধ্যমে একটি জমি কিনে বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নেই। বাড়ি নির্মাণকালে বেলাল চৌধুরী আমার কাছে এসে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের কমিটি গঠনের কথা বলে ফরম প্রতি ২ হাজার টাকা আদায় করেছেন এই চৌধুরী। ফরম ক্রয় করা রাকিব ইসলাম ভুবন বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগ” আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠন এবং তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিচয় দিতেন বি. চৌধুরী। এই কমিটির সভাপতি পরিচয়ে তিনি আমাদের কমিটিতে আসার আহবান করেন। এ সময় একটি ফরম দিয়ে আমাদের প্রলুব্ধ করেন এবং ২ হাজার করে টাকা আদায় করেন। খোঁজ নিয়ে শুনি এধরনের কোন সংগঠন আওয়ামী লীগে নেই। পরে বুঝলাম আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি।
জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত বি. চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রজন্মলীগের কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ভাত খাচ্ছি, খেয়ে ফোন দেবো। পরবর্তীতে তিনি আর ফোন দেননি এবং রিসিভও করেননি।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ ধরেনর অভিযোগ আগেও আমারা পেয়েছি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।