মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ন
হাইকোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন সংস্করণ : শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার বাদির মূল এজাহার গ্রহণ না করে মনগড়া এজাহার সৃজনের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত হয়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাকিলউদ্দিন আহমেদ। থানার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। যা দণ্ডবিধির ১৬৬ ও ১৬৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালত বলেছে, দণ্ডবিধির ওই দুটি ধারার অপরাধ দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের তফসিলভুক্ত। এ কারণে ওসি সাকিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও আনুষাঙ্গিক নথি দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণের রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হলো। এসব নথির ভিত্তিতে সাকিলের বিরুদ্ধে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে দুদক। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এ রায় দেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আমরা দৈনন্দিন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ইদানিং প্রায়শ লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এসব বিষয়ে পুলিশের আইজি বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন এবং করছেন। কিন্তু ওইসব অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না। হাইকোর্ট বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও উন্নয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, জাতিসংঘ শান্তি মিশনের কার্যক্রমে অনবদ্য অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে এবং রেখে চলেছে। এটা শুধু পুলিশ বাহিনীর জন্যই গৌরবের নয়, সমগ্র জাতির গৌরব। কিন্তু এই গৌরব গুটিকয়েক পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যদের অন্যায়, বেআইনি আচরণ ও অপরাধের কারণে ম্লান হতে দেয়া ঠিক নয়। এ কারণে হাইকোর্ট প্রত্যাশা করে যে, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপিত হলে ওই অভিযোগ সম্পর্কে দ্রুততার সঙ্গে বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন এবং দোষী প্রমাণিত হলে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, আদালতের এ প্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের আইজি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ‘আইজিপি কমপ্লেইন্টস মনিটরিং সেল’এর কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও গতিশীল করা হবে।
হত্যা মামলার তদন্ত করবে পিবিআই
চলতি বছরের ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা বাদি হয়ে পুঠিয়া থানায় আটজনকে আসামি করে এজাহার দেন। ওই এজাহারে বলা হয়, শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। কিন্তু ওই এজাহারটি গ্রহণ করেননি ওসি। পরবর্তীকালে বাদিকে ডেকে নিয়ে জব্দ তালিকা, সুরতহাল প্রতিবেদনসহ কিছু সাদা কাগজের উপর স্বাক্ষর নিয়ে রাখে পুলিশ। পরবর্তীকালে ওই সাদা কাগজে এজাহার টাইপ করে থানায় তা রেকর্ডভুক্ত করা হয়। বাদি কর্তৃক থানায় প্রেরিত এজাহারের বর্ণনার সঙ্গে দায়েরকৃত এজাহারের বর্ণনার মধ্যে অসঙ্গতি বিদ্যমান। সর্বোপরি এজাহারে আটজনকে আসামি করা হলেও পুলিশ কর্তৃক সৃজনকৃত এজাহারে কোন আসামি নাম উল্লেখ ছিলো না। সেখানে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা ছিল। যা রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে। এজন্য থানার ওসিকে দায়ী করা হয়। হাইকোর্ট বলে, থানার ওসির মত দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ গুরুতর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে গত ১১ জুন নিগার সুলতানা কর্তৃক প্রেরিত মূল এজাহারটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্সকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার মামলাটির তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আদালত প্রত্যাশা করে।
শিশুর পরিচয় প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ; রাজশাহীর এসপির ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট নয়
হাইকোর্ট বলেছে, শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যা মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় এক শিশু। রাজশাহীর পুলিশ প্রেস-বিজ্ঞাপ্তর মাধ্যমে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। কিন্তু শিশু আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী শিশুর স্বার্থের পরিপন্থী কোন ছবি বা তথ্য গণমাধ্যমে বা ইন্টারনেটে প্রচার করা যাবে না। যা দ্বারা শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়। এ বিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার দেয়া ব্যাখ্যা স্পষ্ট নয় বলে মনে করে হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, এ ঘটনায় একজন শিশুর জবানবন্দি প্রেস-বিজ্ঞপ্তি আকারে গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করে রাজশাহীর পুলিশ প্রশাসন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং আইন ভঙ্গ করেছেন। তাই শিশু আইন সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের সচেতনতামূলক ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে আইজিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ওই হত্যার ঘটনার পর এক শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই শিশুর দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রকাশ করে পুলিশ। যেখানে বলা হয়, শিশুকে অনৈতিক আচরণে বাধ্য করায় নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। যদিও ওই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল তার পরিবার। তারা বলছে, মূল আসামিদের বাঁচাতে ও ঘটনা ভিন্নখাতে নিতেই এই শিশুকে আটক করা হয়েছে।
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০/এসএম