রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি যান চলাচল শুরু হয়েছিল। ৪৫৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতু স্থানীয়দের কাছে ‘শম্ভুগঞ্জ সেতু’ হিসেবে পরিচিত। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৪৩ কোটি টাকা।
দিন দিন সেতুটিতে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তাই এর কাছাকাছি ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি হবে রেলওয়ে ওভারপাস ও ৪-লেন অ্যাপ্রোচ সড়ক। এজন্য একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পেই খরচ হচ্ছে ১৮ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকাই খরচ করা হচ্ছে পরামর্শক সেবায়।
‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অ্যান্ড ডিটেইলড ডিজাইন ফর কন্সট্রাকশন অব কেওয়াটখালী ব্রিজ ওভার দ্য রিভার ব্রহ্মপুত্র অ্যাট ময়মনসিংহ উইথ রেলওয়ে ওভারপাস অ্যান্ড ৪-লেন অ্যাপ্রোচ (ইনক্লুডেড সার্ভিস রোড) রোড’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেতুটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ওই বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন তার মেয়াদ বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। একইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে খরচও।
এ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের খরচ ও মেয়াদ বাড়াতে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সূত্র বলছে, প্রকল্পের আওতায় সংশোধিত টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স টিএপিপি প্রস্তাবের ওপর গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিএসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সুপারিশ অনুযায়ী ২৭ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ অনুমতি দিয়েছেন।
প্রকল্প সূত্র জানায়, সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের মূল খরচ ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকারের দেয়ার কথা ছিল নয় লাখ এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে এর খরচ বাড়িয়ে ১৮ কোটি চার লাখ ১৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ছয় লাখ এবং এআইআইবি দেবে ১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাবিত খরচে বলা হয়েছে, মোট খরচের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি অ্যান্ড ডিটেইলড ডিজাইন কনসালট্যান্ট বাবদ খরচ ১৬ কোটি ৪৮ লাখ, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অব আরএইচডি অফিসিয়ালসে খরচ এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া বিজ্ঞাপন খরচ দুই লাখ, সম্মানী তিন লাখ ২০ হাজার এবং স্ট্যাম্প ও সিলে খরচ ৮০ হাজার টাকা।
ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে ২৫ জুলাই ডিএসপিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেছিলেন, প্রকল্পের দলিল প্রস্তুতের সময় বৈদেশিক মুদ্রা আমেরিকান ডলারের বিনিময় হার এক ডলার সমান ৮০ টাকা হিসেবে করা হয়েছিল। প্রকল্পের পরামর্শ সেবা গ্রহণের জন্য নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির সময় ডলারের সেই বিনিময় হার ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সায় উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করলে তা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া প্রাথমিক প্রাক্কলনে পরামর্শকের ভ্যাট ও ট্যাক্সের পরিমাণ যথাক্রমে ১৫ ও ১২ শতাংশ হিসেবে নির্ণয় করা হলেও পরে বিদেশি পরামর্শকের ক্ষেত্রে এ ট্যাক্সের হার বিধি মোতাবেক ২০ শতাংশ ধরে পুনঃপ্রাক্কলন করা হয়। এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ১৬ হাজার থেকে ১৮ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়। ফলে সঠিক ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা মূল প্রকল্প ব্যয়ের ৮ শতাংশ বৃদ্ধি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই।’
প্রকল্পের কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান বিডিসির ওয়াদুদ বলেন, ‘কনসালট্যান্সি করা হয়ে গেছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মূল কাজটা করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কনসালট্যান্সি ফার্ম। এরই মধ্যে তারা কাজ জমা দিয়েছে। আমরা কোরিয়ান ফার্মকে সাপোর্ট দিয়েছি। রিপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে মন্ত্রণালয়ে। অনেক আনুষ্ঠানিকতা আছে, ডিপার্টমেন্ট সেটা দেখছে।’
এসএস