সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : আবেদ মুখভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে নিজেকে নিয়ে ভাবতে লাগল। কোম্পানি যে হারে কর্মী ছাঁটাই করছে, না জানি কবে তার নামটাও তালিকায় চলে আসে। কোম্পানির কাজ কমে যাওয়ায় ওভারটাইম বন্ধ। এখন বেসিক ডিউটি করে কোনো রকম চলে যাচ্ছে তার। ছাঁটাইয়ের ভয়ে ইনক্রিমেন্টের কথা বলেন না প্রবাসী আবেদ।
যে টাকা বেতন পায় তা দিয়ে টিমটাম চলে যায়। সঞ্চয় করার মতো সব রাস্তাই বন্ধ। সে কিছুদিন পার্টটাইম জব খুঁজেছে। গত সপ্তাহে একদিন পার্ট টাইম জব করে এসেছে। সিঙ্গাপুরে তার মতো অনেকেই পার্টটাইম জব করছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে।
সিঙ্গাপুরে পার্ট টাইম জব করা নিষিদ্ধ। তবুও ঝুঁকি নিয়ে তারা জব করে। পার্টটাইম জব হলো অফিস শেষে বিশ্রাম না নিয়ে ঘণ্টাভিত্তিক কোথাও কাজ করা। এখানেও সমস্যা আছে যারা কাজ যোগাড় করে দেয় তারা মাথাপিছু ৫ ডলার ফি নেই।
এমনকি অনেক সময় পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয়। অভিবাসী কর্মীরা যেহেতু লুকিয়ে কাজ করে তাই কারো কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করতেও পারে না। আর এ সুযোগটা কিছু অসাধু ব্যক্তি লুফে নিচ্ছে।
আবেদ গত সপ্তাহে যে পার্ট টাইম জব করেছিল তার মজুরি এখনো পায়নি। কথা ছিল ৫ ডলার নেবে আর কাজ শেষে মজুরি পরিশোধ করবে। কিন্তু তারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আজ গিয়েছিল পাওনা টাকা আদায় করতে। টাকা তো দূরের কথা যে লোক কাজ দিয়েছিল আজ তার দেখাই পায়নি।
ভাবতে ভাবতে আবেদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। পুরনো বছর শেষ নতুন বছর শুরু হয়েছে। অথচ তার জীবনে কোনো পরিবর্তন নেই। বরং নতুন বছর তার হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা। পুরনো বছরের অঙ্গীকার পূরণ করার বছর।
গত বছরে সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, এ বছর বোনকে বিয়ে দেবে, নতুন ঘর করবে এবং নিজেও বিয়ে করবে। গত দুই বছর যাবত সে একই প্রতিজ্ঞা করছে। প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে চাই টাকা। টাকার জন্য চাই কাজ। কিন্তু গত দুই বছরে তার আয় এক টাকাও বাড়েনি। ইনকাম না বাড়লে তো প্রতিজ্ঞা পূরণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
এভাবে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েই তাকে বছরের পর বছর পার করতে হবে। ভেবেছিল বসের কাছে গিয়ে বেতন বাড়ানোর কথা বলবে কিন্তু হঠাৎ শুনল নতুন বছরে আরো কিছু কর্মী ছাঁটাই করা হবে। তাই বসকে আর বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয় না।
পরিবারের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার টেনশন, চাকরি হারানোর ভয়ে মাথায় জট পাকিয়ে যায় আবেদের। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অবশিষ্ট অংশটুকু পায়ের নিচে ফেলে পিষ্ট করে এগিয়ে যায় আবেদ।
বাসায় ফিরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। দেশ থেকে একের পর এক কল আসছে কিন্তু কারো কল সে রিসিভ করছে না। তার ভেতরটা গোপন কান্নায় ফেঁটে যাচ্ছে। তাকে যে কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চাকরি ছেড়ে দেশে চলে যাওয়াই তার জন্য উত্তম।
কিন্তু সে জানে দেশে গিয়ে যে আয় হবে তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ কষ্টকর হয়ে যাবে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে চারপাশ মুখরিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় ভরপুর। কিন্তু নতুন বছর আবেদের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
শুধু আবেদ নয় তার মতো নিম্ন আয়ের প্রবাসীদের জীবনে কোনো উৎসবই প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাদের কাছে প্রত্যেকটা দিনই সমান। ভোরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে অফিসে যাও। অফিস শেষে বাসায় ঘুমাও। এছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না।
বিছানা থেকে উঠে বাথটাপের নিচে পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবেদ। পানির সঙ্গে তার ভেতরের সব কষ্ট, সব দুঃখগুলো ভেঁসে যাক। পানির নিচে দাঁড়িয়ে কেন জানি তার ইচ্ছেমতো কান্না করতে ইচ্ছে করছে। এখানে কান্না করলে কেউ তার চোখের জল দেখবে না।
নিজের অজান্তেই তার চোখের পাতা গলে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগল। মনের ভেতর কষ্টগুলো যখন পুঞ্জীভূত হয় তখন তা চোখের জল এমনিতেই গড়িয়ে পড়ে। আবেদ মনে মনে বলছে মুক্তি চাই এই দু:সহ জীবন থেকে মুক্তি চাই প্রবাস জীবন থেকে।
এসএস