রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১২:০৫ অপরাহ্ন
বান্দরবান(লোহাগাড়া) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও বান্দরবান লামা উপজেলার হাসনাপাড়া সীমান্তে সরই খালের সেতুটির পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কিন্তু সেতু নির্মাণ করার আগে যাতায়াতের জন্য সেতুর পাশে আরেকটি বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে লোহাগাড়া- সরই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয়দের।
বিশেষ করে চলতি মৌসুমে পার্বত্য লামা উপজেলার কয়েকশ বাগানে উৎপাদিত আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচুসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বাজারজাত করণে দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
যেহেতু তাদের এই সেতু দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লায় করে,এখন সেতু না থাকায় সম্ভব হচ্ছে না। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান বাগান মালিকসহ স্থানীয় কৃষকেরা।
তারপরও বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা করছেনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি কয়ক দিন আগে লোহাগাড়া উপজেলার সুযোগ্য নির্বাহী অফিসার সেতুর কাজ পরিদর্শন করে ঠিকাদারকে দ্রুত বিকল্প রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ দেন এর পরেও বিকল্প রাস্তা নির্মাণের কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না।
এছাড়া এই কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে ধীরগতিরও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। দ্রুত যাতায়াতের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাসহ সেতুটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দুই উপজেলার মানুষ। তা না হলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানায় ভুক্তভোগী লোকজন।
সূত্র জানায়, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সরই নামের একটি খাল। এ খালের এইপ্রান্তে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়ন ও অন্যপ্রান্তে বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন।দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার্তে গত ২০ বছর আগে খালের হাসনাভিটা নামক স্থানে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করে বান্দরবানের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ সেতুটিই ছিল দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে পার্বত্য লামা উপজেলায় অবস্থিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে শত শত পর্যটক যাওয়া- আসা করে।
কিন্তু বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও বাহিরাগত কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এ সেতুর দুইপাশ থেকে বালু উত্তোলন এবং ধারণ ক্ষমতার অধিক যানবাহন চলাচলের কারণে সেতুর নিচের মাটি সরে গিয়ে নড়েবড়ে হয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২০ জুন অতিবর্ষণে পানির স্রোতে সেতুটির এক পাশ ধসে পড়ে।
এতে ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও সেতুটির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারত দু`পাড়ের মানুষ। কিন্তু দরপত্র আহবানের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুণ:নির্মাণের জন্য সেতুটির উপরের অংশ ভেঙে ফেলে। এতে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় লেখালেখি ও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে গত তিন মাস আগে চট্টগ্রাম জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়। এতে সেতুটির নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শাহ্ জব্বারিয়া ট্রেডার্স।
গত তিন মাস আগে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। অভিযোগ ওঠেছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চলাচলের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করেই কাজের শুরুতেই শ্রমিক লাগিয়ে পুরাতন সেতুটির ওপরের অংশ ভেঙে ফেলে।
এতে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ চরম আকারণ ধারণ করেছে। এছাড়া কার্যাদেশ মতে গত গত তিন মাস আগে সেতু পুনঃনির্মাণ কাজ শুরুর কথা থাকলেও নানা অযুহাত দেখিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে থেকে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। এরপরও কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত বছর সেতুটির এক পাশ ধসে পড়ার পর এলাকাবাসীর সহায়তায় পাশেই একটি বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করেন। গত দু বছর ধরে এ কাঠের সেতুর ওপর দিয়েই স্থানীয়রা সিএনজি, মোটর সাইকেল, টমটম যোগে চলাচলসহ কৃষি পণ্য পরিবহন করে আসছিলেন। কিন্তু টানা ভারী বর্ষণের ফলে বিকল্প এ কাঠের সেতু টিও গত কিছু দিন আগে স্রোতের টানে ভেসে যায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে আটকে আছে অন্তত অর্ধশত যানবাহন।
গাড়ি পরিবর্তন করে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। গাড়ি ভাড়া ও দিগুন গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের এছাড়া সেতুটির লোহাগাড়া উপজেলার অংশে কিছু পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী জমা করে রেখেছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। কয়েকজন শ্রমিককে একটি পিলারের পাইলিং কাজ শুরু করতে দেখা যায়।
স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইদ্রিস কোম্পানী ও সরই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানে আলম বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। গত তিন মাসে শুধুমাত্র একটি পিলারের পাইলিং কাজ করা হয়েছে। কাজে ধীরগতির কারণে যারা প্রতিদিন অফিসগামী ও ব্যবসা বাণিজ্যের কারনে বা জরুরি প্রয়োজনে এ সড়ক দিয়ে বাধ্য হয়ে যাতায়াত করেন তারা পড়েছেন বিপাকে।
বিশেষ করে পার্বত্য লামা উপজেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতায়াতের বিকল্প রাস্তা তৈরি না করলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচি নেবে স্থানীয়রা। সিএনজি চালক মোহাম্মদ কাইছার , ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক ছৈয়দ বলেন,আগে আমরা লোহাগাড়া আমিরাবাদ থেকে ক্যায়াজুপাড়া বাজার পর্যন্ত চলে যেতে পারতাম কিন্তু এখন ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়া যায়।
এরপর যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। আবার বাধ্য হয়েই যাত্রীরা মালামাল কাঁধে নিয়ে পায়ে হেঁটে খাল পার হয়ে ওপাড়ে গিয়ে আবার গাড়িতে ওঠেন। খালে বেশি পানি থাকলে তাও সম্ভব হয়না। অনেক সময় হেঁটে খাল পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অহরহ।
সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা নুরুল আলম জিকু বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে বটে। তবে ইতিমধ্যে ২০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, আগে বিকল্প যাতায়াতের জন্য সহযোগিতা করেছি। বর্তমানেও স্থানীয়রা যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলে সহযোগিতা করা হবে।
এই বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী দিবাকর রায় জানায়, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ঠিকাদারের সাথে কথা বলে যাতায়াতের বিকল্প রাস্তার ব্যবস্হা করা হবে।
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০/এসএস