বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৪ অপরাহ্ন
ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাইয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ভয় দেখিয়ে লেকাসানের মুখে সরকারি গুদামে চাল দিতে বাধ্য করা হচ্ছে মিলারদের। প্রতি বছর সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন ধামরাইয়ের মিলাররা। যে কারণে চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহ অভিযানে চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহ হারিয়েছেন তাঁরা। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হবে বৃহস্পতিবার। এক মিল মালিককে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ভয় দেখিয়ে চুক্তিতে আনতে পারলেও অন্য মিলারদের চুক্তিবদ্ধ করতে পারেনি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার চাল সংগ্রহ অভিযানে ৯০৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে উপজেলার ৫টি মিলারকে চুক্তিবদ্ধ হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাহেব আলীর মালিকানাধীন মেসার্স সুমন অটো রাইস মিলকে ২৩৫ মেট্রিক টন, তমিজ উদ্দিনের মালিকানাধীন মেসার্স কিষাণ এগ্রো ফুড অটো রাইস মিলকে ২৪০ মেট্রিক টন, মেসার্স কিষাণ রাইস মিলকে ৩০ মেট্রিক টন, মোঃ মোস্তফার মালিকানাধীন মেসার্স কাদের অটো রাইস প্রসেসিং মিলকে ১২২ মেট্রিক টন ও আব্দুস সালামের মালিকানাধীন মেসার্স আছিয়া অটো রাইস মিল লিমিটেডকে ২৮১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সরকারি গুদামে সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে চিঠি দেওয়া হয়। পাঁচটির মধ্যে একমাত্র তমিজ উদ্দিন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ভয় দেখানো হয়েছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে। অন্যরা এখনো চুক্তিবদ্ধ হয়নি।
সরকারিভাবে প্রতি কেজি চালের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সরকারের নির্ধারণ করা দরে চাল সরবরাহ করলে প্রতিকেজিতে ৭-৮ টাকা লোকসান গুণতে হবে প্রতি মিলারকে। ফলে তারা চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী নয়। তবে সরকারকে দর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
কেন চুক্তিবদ্ধ হতে রাজি ছিলেন এ বিষয়ে সাথে কথা মিল মালিকদের মধ্যে তমিজ উদ্দিন, সাহেব আলী, আজগর আলীসহ বেশ কয়েক জন মিলারের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে এখন মোটা চাল প্রায় ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি গুদামে চাল দিলে এবারও বেশি লোকসান গুণতে হবে। এর ওপর আবার সরকারকে ২% হারে আয়কর দিতে হবে। এতে তমিজ উদ্দিনের প্রায় ২২ লাখ টাকা, সাহেব আলীর প্রায় ১৯ লাখ টাকা, মোঃ মোস্তফার প্রায় ১০ লাখ টাকা, আব্দুস সালামের প্রায় ২২ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে। প্রতি মণ ধানের বর্তমান বাজার দাম ১২৬০-১৩০০ টাকারও বেশি। এই দরে ধান কিনে চালের দাম ৪৭-৪৮ টাকা কেজি পড়লেও সরকার দাম দেবে ৪২ টাকা। গত দুই বছরও প্রচুর লোকসান গুণতে হয়েছে। এবারও একই অবস্থা।
এছাড়া তাঁরা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মিল করতে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন চুক্তি না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও লাইসেন্স বাতিল করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সরকারকে চালের মূল্য পুণঃনির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন মিলাররা।
মেসার্স আছিয়া রাইসমিলের আজগর আলী বলেন, লোকসানের মুখে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখানো হচ্ছে। এতো টাকা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনিও চালের দর পুনঃনির্ধারনের দাবি জানান।
পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুমন অটো রাইস মিলের মালিক সাহেব আলী বলেন, মিলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ভয়ের চেয়ে লোকসানের ভয়ই বেশি।
এদিকে মিলারদের মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও লাইসেন্স বাতিল করার ভয় দেখিয়ে উপজেলার বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিনকে চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ করতে বাধ্য করেছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক লীনা আহমেদ।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক লীনা আহমেদ জানান, গুদামে চাল সরবরাহের আগ্রহ নেই মিলারদের। কিন্তু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও লাইসেন্স বাতিল করার ভয় দেখিয়ে তমিজ উদ্দিনকে চুক্তিবদ্ধ করেছি। চুক্তিবদ্ধ করতে অন্য মিলারদের ক্ষেত্রে একই কৌশল অবলম্বন করা হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘কেজি প্রতি মিলারদের ৭-৮ টাকা লোকসান হবে। এছাড়া মিলারদের দুই শতাংশ উৎস কর ধার্য করায় মিলাররা চাল দিতে আগ্রহী নয়’।