শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : খানাখন্দ রাস্তা থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কে রুপান্তরিত হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটি সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া যথাযথ প্রশস্তকরণ করার পর বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচলের কারণে গেল ২০২০ সালে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘায়িত হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। এতে আপন জনের বিয়োগ ব্যথায় কাঁদছে পরিবারগুলো।
জানা গেছে, আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে দিয়ে প্রশস্তকরণ হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই পুরো সড়কে দেখা দেয় ফাটল। তার মধ্যে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ভারী যানবাহন বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে বেপরোয়া গতিতে চলাচলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। গেল বছরের অতীতের রেকর্ডভঙ্গ করে সড়ক দুর্ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সূত্রমতে. গত ২২ অক্টোবর দুপুরে বিনোদপুর এলাকায় সড়ক দুঘর্টনায় মারা যান বাসের ড্রাইভার হ্নদয় ও দু‘যাত্রী নিখিল ও আনোয়ারা খাতুন। মারাত্মকভাবে আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। তার একদিন আগে সন্ধ্যায় ডাবলবীজ এলাকায় মোটরসাইকেল চাপায় প্রাণ হারান মেদুলিয়া গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী সেলিম। গত ১৭ অক্টোবর সকাল ৯ টার দিকে মিতরা বাসস্ট্যান্ডে ট্রাকের চাপায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র আবুল সিকদার। গত ১৩ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে দেউলি-কিটিংচর এলাকায় ট্রাক ও সিএনজি সংঘর্ষে নিহত হন নাজিমুদ্দিন ও ৩ বছরের শিশু ইনফা। আহত হন কম কমপক্ষে ১০-১২ জন।গত ২ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে কাশিমনগর বাসষ্ট্যান্ডে অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় মারা যান ইটভাটা সরদার আব্দুল জলিল মোল্লাহ। গত ১ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া ৯ টার দিকে কিটিংচর নূরালীকুমের পূর্ব পাশে মোটর সাইকেল ও ট্রাক সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান গরুর ব্যবসায়ী আরমান। গত ৮ আগষ্ট রাত সাড়ে ৮ টার দিকে বাস্তা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে মোটর সাইকেল- পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান মোটর সাইকেল চালক আশরাফ খান ও পিকআপের যাত্রী শিশু আব্দুল্লাহ।
গত ১৩ জুলাই দাদার সাথে বাজার করতে এসে ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান সুদক্ষিরা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান নামের ৮ বছরের শিশু। গত ১১ জুলাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাড়ির ভিতরে ট্রাক ঢুকে একই পরিবারের আপন দু‘বোন-৯ বছরের সুর্বনা ও ২ বছরের ইনফার প্রাণ কেড়ে নেয়। তার কয়েকদিন আগে পূর্ববাস্তা এলাকায় হ্যালো বাইকের চাপায় মারা যান আবুল কালাম ওরফে কালা মিয়ার স্ত্রী। এ দিকে, গত ২১ মার্চ মেদুলিয়া গ্রামে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাড়ির সামনে মোটর সাইকেলের চাপায় আহত হন সিংগাইর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বাদশাহর পিতা শেখ আইয়ুব আলী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ আগস্ট সে মারা যান। এ তথ্যের বাইরেও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান অর্ধডজন ব্যক্তি। অধিকাংশ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ময়না তদন্তের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে মামলা করেননি বলে জানা গেছে । স্থানীয়রা জানান, সড়কটি প্রশস্তকরণে প্রতিদিন এ সড়কে যোগ হচ্ছে বৈধ-অবৈধ যানবাহন।
ওই সমস্ত যানবাহনের চালকদের নেই কোন লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ। তারা আরো বলেন, রাতের বেলায় সড়কটিতে অন্য সড়কের গাড়ী চলাচল করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। পশ্চিম বাস্তা গ্রামের ই¯্রাফিল অভিযোগ করে বলেন, ট্রাক বাড়িতে ঢুকে আমার দুটি সন্তান মেরে ফেলে কোল খালি করে দিয়েছে। আমার মত এ রকম যেন আর কারো পরিবারে না ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা হারা সাংবাদিক মাসুম বাদশাহ বলেন, সড়কটি দক্ষিণ পাশে গাইড ওয়াল দেয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে । কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য পুরানো গাছে। দেয়া হয়েছে নামমাত্র নিরাপত্তা বেষ্টনী। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তিনি আরো বলেন , নির্মিত গাইড ওয়ালে সিঁড়ি না থাকায় উঠানামা সম্ভব নয়। এ কারণে দুর্ঘটনায় কবলিত যানবাহন খাদে পড়ে গেলে যাত্রীদের চিকিৎসাতো দূরের কথা উদ্ধার করা একেবারে অসম্ভব।
এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস-উল- হাসান মারুফ বলেন, চীফ ইঞ্জিনিয়ারের অনুমতি ছাড়া কোন সাক্ষাৎকার দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধ কল্পে ইতিমধ্যে ডিসি স্যার সড়কটি পরিদর্শন শেষে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এসএস