বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোটার : সাভার পৌরসভা নির্বাচনের সংবাদ প্রকাশ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নির্দেশনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষে মধ্যে। বুধবার (৩০ শে ডিসেম্বর) বিকেলে সাভার পৌরসভা নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসাইন খান। এসময় তিনি “নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের কোন নেতিবাচক বিষয়েও সংবাদ করা যাবে না”, নির্বাচন একটি সেনসিটিভ বিষয়, একটি নিউজের জন্য সব গণ্ডগোল হয়ে যাবে, পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আনা কঠিন হয়ে যাবে, নেগেটিভ থাকলেও সবকিছু পজিটিভলি দেখতে হবে বলে সাংবাদিকদের দিকনির্দেশনা দেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাভার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফখর উদ্দিন শিকদার, মিরপুর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ প্রমুখ।
এ সংবাদ একাধিক অনলাইন পোর্টালসহ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয় সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও জনসাধারণের মধ্যে।
তবে বিবিসি বাংলার সংবাদটি দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০’র পাঠকদের সামনে হুবহুব তুলে ধরা হলো :-
বিবিসি বাংলার শিরোনাম ছিলো ‘নির্বাচনের সংবাদ প্রকাশ নিয়ে সাংবাদিকদের নির্দেশনা দিলেন কর্মকর্তা, কতটা আইনসম্মত?’
রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি উপজেলা সাভারের একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের পৌরসভা নির্বাচনের সংবাদ প্রচার করার নির্দেশনা দেয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব নিয়ে বেশি প্রশ্ন করা বা সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের কোন নেতিবাচক বিষয়েও সংবাদ করা যাবে না। ৩০শে ডিসেম্বরে সাভার পৌরসভা নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মি. খান বলেন, “নির্বাচন একটা সেনসিটিভ জিনিস, একটা নিউজের জন্য পুরো গণ্ডগোল হয়ে যাবে, পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আনা টাফ হয়ে যাবে।”
সম্পদের বিবরনী নিয়ে তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা অনেক সময় নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন। এতে ওই প্রার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, তার নির্বাচনী কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়। এগুলো করা যাবে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মুনির হোসাইন খান বলেন, বিষয়টি এভাবে বলা হয়নি।
মি. খান বলেন, অনেক সময় অনেক সাংবাদিকের আত্মীয়-স্বজনরা নির্বাচনে অংশ নেয় এবং এ কারণে তাদের বিরোধী পক্ষের প্রার্থীকে তার সম্পদের বিবরণী ধরে নানা প্রশ্ন করে থাকেন। যা এরইমধ্যে বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
“তার পক্ষের আত্মীয় তার বিপরীত পক্ষকে হয়রানি করে, আর কাউকে করে না।” তিনি অভিযোগ করেন।
মি. খান বলেন, এই বিষয়টা যাতে না ঘটে তার জন্যই এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
“আমরা বলতে চাই যে, করলে সবাইকে নিয়েই করেন, না করলে দরকার না।”
“যেকোন সংবাদই করা যাবে। তবে আগে আমাদের নলেজে একটু দিয়ে রাখবেন। তাহলে আমি একটু বলতে পারবো যে এ বিষয়ে জানা আছে এবং আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি বা নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, লোকাল ইলেকশন অনেক টেন্সড থাকে। একজনকে হয়তো ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো, ওই ঘটনা নিয়েই নিউজ হলো কিন্তু জরিমানার কথা আসলো না।
“তখন আবার উনি শুরু করবে যে এইটার কথা তো আসলো না।”
তিনি বলেন, কোন কিছুতেই বাধা নাই। অবাধ নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করবে। কিন্তু একটু যাচাই-বাছাই করে দিবে যাতে প্রকৃত সংবাদটা উঠে আসে।
বিষয়টি নিয়ে বর্তমান একজন নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনিয়ে বিস্তারিত না জেনে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাই এ ধরণের কথা বলতে পারেন না।
“ল ডাস নট পারমিট। কোন নির্বাচন কমিশন এ ধরণের বিষয় আরোপ করতে পারে না।”
তিনি বলেন, সম্পদের বিবরনী জনগণকে জানানোর জন্যই নেয়া হয়ে থাকে। এটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে।
মি. হোসেন বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়কে কেউ অবহেলা বা অমান্য করতে পারবে না।”
সুপ্রীম কোর্টের ওই রায়ে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি ভোটারের জানার অধিকার আছে যে, সে কাকে ভোট দিচ্ছে। তাই কোন প্রার্থীকে প্রশ্ন করলে তার বিব্রতবোধ করার কিছু নাই।
“ইলেকশন কমিশন যদি নির্দেশনা দেয় যে ওকে বিব্রত করা যাবে না, নেগেটিভ বলা যাবে না, পজিটিভ বলতে হবে, এটা কোনভাবেই বলা যাবে না।”
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, যদি কোন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এ ধরণের নির্দেশনা দিয়ে থাকে তাহলে তাকে আইনিভাবে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে।
এসএস