বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোটার : ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেছেন, দেশে যতো পৌরসভা রয়েছে তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা হলো সাভার পৌরসভা। এ পৌরসভার নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী রয়েছে। ভোট পবিত্র আমানত। ভোট সম্পর্কে আপনাদের জানতে হবে। ভোট রক্ষা করতে হবে। না জানলেই সমস্যা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মিডিয়াকে বলা হয় দেশের চতুর্থ শক্তি। যেকোন সমস্যা, খারাপ কাজ এখন মিডিয়াতে তাৎক্ষণিকভাবে চলে আসে। তাই কারচুপি বা অন্যায় করে কেউই পার পাবেন না। সকলে স্বর্তস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দেবেন। আজ রবিবার বিকেলে সাভার সরকারি কলেজ মিলনায়তনে সাভার পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথি ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ধামরাই পৌরসভা নির্বাচনে ৫৭ পারসেন্ট ভোট পড়েছে। সম্প্রতি রাজধানীতে দুটি নির্বাচনে এমন পারসেন্টিস ভোট পড়েনি। কিন্তু উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে ভোট বেশী পড়ছে। তিনি বিজয়ী হবেন তারা সবার এবং সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর ভেবে কাজ করবেন। না হলে পুনরায় আর বিজয়ী হতে পারবেন না। এ নির্বাচনে নারীদের কোন ভয় নেই। কারণ দেশের পার্লামেন্টে প্রধান নারী এবং প্রশাসন প্রধান নারী। পুরুষ শুধু ঘর সামলায়। নারী ঘর ও বাহিরসহ সব সামলায়।
ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সাভার পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্ণিং অফিসার মুনীর হোসাইন খানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফি, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা। সভা পরিচালনা করেন পৌর নির্বাচনের সহকারি রিটার্ণিং অফিসার ও মীরপুর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ জালাল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ঢাকা জেলায় আমি যোগদান করার পর থেকে দেখে আসছি সাভারের মানুষ অভিজাত, নম্র, ভদ্র। আপনাদের নিজস্ব একটি ঐতিয্য আছে। আশা করছি আসন্ন নির্বাচনে আপনারা সে ঐতিয্য তুলে ধরবেন। আপনাদের সম্পর্কে আমার ধারণা যেন না পাল্টায়। নির্বাচনে কেউ অনিয়ম করে পার পাবেন না। আগের দিন থেকে শুরু হয়ে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত পেট্রোল ডিউটি থাকবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন কাউন্সিলর প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু লিখিত না দিলে বুজবো কি করে। লিখিত না দিলে আমরা নিতে পারি না। তিনি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার নারীদের এগিয়ে চলার নীতিকে সমর্থন করে। তাই নারী প্রার্থীকে আমরা স্বাগত জানাই।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণের সাথে মতবিনিময় সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক প্রার্থীদের বক্তব্য আহবান করলে বেশ কয়েকজন প্রার্থী মাইক্রোফোন নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
মেয়র পদে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আলহাজ¦ মোঃ রেফাত উল্লাহ বলেন, ১৩ বছর মেয়র ছিলাম। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আমার বড় ভাইয়ের সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার সাথে যেখানেই দেখা হউক সালাম দেই। কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। সম্পর্ক খুবই সৌহাদ্যপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচন আসার পরই সম্পর্ক কেমন যেন হয়ে গেছে। আমি বুজতে পারছি না। আমার পোস্টার তার দলের লোক ছিঁড়ে ফেলছে। লিফলেট পুড়িয়ে দিয়েছে। দুইবার আমার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমি ছবি ও ভিডিওসহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। সুষ্ঠুভোটে নির্বাচিত হলে আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে স্বাগত জানাবো।
আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী আবদুল গণি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকেরা বিভিন্নস্থানে আমার অনেক পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর দলের মধ্যে অভ্যন্তরিণ কোন্দল আছে। তারাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আমার কোন লোক তাদের প্রচারনায় বাধা দেয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাকে বক্তব্য খন্ডন না করে অভিযোগ ও সুপারিশ থাকলে তা পেশ করার জন্য বললে তিনি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দাবি করেন।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেন রনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকজন প্রার্থীর ৩/৪টি করে প্রচারনা ক্যাম্প রয়েছে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে আইন-শৃংখলা বাহিনী নেই, কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই। থাকলে তারা কি এসব বিষয় দেখেন না কেন। আমি বাদে সবাই মিছিল করছে, আর আমি বোকা হয়ে বসে আছি। এ সময় জেলা প্রসাশক তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন, ফোনে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগ দেইনি। তাকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি জেলা প্রশাসক।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিক নিউটন বলেন, নির্বাচন আসলে অনেক নতুন মুখের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। আমার ওয়ার্ডে সংখ্যালগু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৬০ পারসেন্ট। অনেক বৃদ্ধ বয়স্ক ভোটার আছে। নতুন পদ্ধতিতে কিভাবে ভোট প্রদান করতে হবে তারা তা জানেন না। এ বিষয়ে আরও প্রচার প্রচারনা করার জন্য প্রস্তাব করেন তিনি।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ খুবই ভালো দেখতে পাচ্ছি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। আশা করি আগামী দিনগুলিতেও থাকবে। নির্বাচন পদ্ধতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইভিএম মেশিনে ইংরেজিতে ক্যানসেল ও কনফর্ম লেখা আছে। লেখাটি বাংলায় লেখা হলে ভালো হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। লেখাটি তিনি বাংলায় লেখার অনুরোধ রাখেন।
একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আব্বাস আলী বলেন, আমার ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী রঙিণ ব্যানার নিয়ে পথসভা করছেন। ৫টি নির্বাচনী ক্যাম্প করেছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কোন প্রতিকার দেখতে পাচ্ছি না। তবে নির্বাচন সুন্দর হবে এটাই প্রত্যাশা করি।
একই ওয়ার্ডের অপর প্রার্থী ইউনুস পারভেজ অভিযোগ করে বলেন, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আমার ওয়ার্ডের একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৫০টি মামলা থাকার কথা ছাপা হয়েছে। কিন্তু উনার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন থেকে কোনরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে মনির হোসাইন খান বলেন, নির্বাচনে কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব ছড়ানো অপরাধ। গুজব ছড়ালে ব্যবস্থ নেয়া হবে। যতটুকু পেরেছি মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করে সবাইকে রেখেছি। অভিযোগ করা হয়, এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট যেতে হবে। না ে গলে বের করা হবে কিভাবে। ইতোমধ্যে মধ্যে আচরণবিধি লঙ্গণের দায়ে পলিথিন দিয়ে পোস্টার মোড়ানোর অভিযোগে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। আগামী ১৪ তারিখ রাত ১২টার পর সকল প্রকার প্রচারনা বন্ধ থাকবে। এ নির্বাচনে যারা হেরে যাবেন এবং বিজয়ী হবেন তাদের সকলকে নির্বাচনী খরচের হিসেব দাখিল করতে হবে।
এসএস