বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি এলাকা এখন ইটভাটার নগরী। প্রতিবছর ভাটার মাটি যোগান দিতে গিয়ে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন। পাশাপাশি মাটি পরিবহনে ট্রলির অবাধ যাতায়াতে গ্রামীণ রাস্তাগুলোর হয়েছে বেহালদশা।
সূত্রে মতে, ২০১৯ সালে উপজেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী এ এলাকায় ৮৬টি ইটভাটা সচল ছিল। এসব ভাটার বেশিরভাগই ২০২০ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। এ থেকে বিভিন্ন কারণে ২০টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে উচ্চ আদালত কর্তৃক ঢাকার পার্শ¦বর্তী জেলাগুলোর ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা এলেও এ উপজেলায় বন্ধ হয়নি কোনো ইটভাটা। তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন অজুহাতে ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর ইট তৈরির প্রধান উপকরণ মাটির যোগান দিতে গিয়ে ফসলি জমি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের জেল জরিমানা করলেও থামানো যাচ্ছে না এ মাটিকাটা। দিনের পরিবর্তে মাটি ব্যবসায়ী ও ভাটার মালিকেরা মাটি কাটার জন্য এখন রাতের আধাঁরকেই বেছে নিয়েছেন। ফলে প্রশাসন রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ঢালিপাড়া গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক রিফায়েতপুর চক থেকে মাটি কাটার দায়ে সম্প্রতি জেল খেটে বের হয়ে পুনরায় বেপরোয়াভাবে ফসলি জমির মাটিকাটা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন সব কিছু ম্যানেজ করেই এগুলো করা হচ্ছে। একই এলাকার তোফাজ্জল, রহিম, শামছুল, মান্নান এবং ফয়সাল অবৈধভাবে এ মাটির ব্যবসা করছেন।
চারিগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর জাইল্যা গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী মো. ফরশেদ আলমকে কিছুদিন পূর্বে খৈয়ামুড়ি ভুলতার বিল চক থেকে ফসলি জমির মাটিকাটার দায়ে ভেকু জব্দসহ দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা। তারপরও থেমে নেই তার মাটির ব্যবসা।
সরেজমিন উপজেলার চারিগ্রাম মৌজার এএইচএম ইটভাটার দক্ষিণ পাশের চকে ফসলি জমির মাটি কাটছেন ভাটা মালিক ও জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল আলীম। তিনি ওই চকের জমির মালিক বালো, মাহাম, জিন্নত আলী, নইদা ও তার ভাইয়ের প্রায় ৩ বিঘাসহ পার্শ্ববর্তী আরো ২ বিঘা জমির মাটি কেটে ওই ইটভাটায় নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুল আলীম সাহরাইল-চারিগ্রাম বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় রাস্তা সংলগ্ন পানি প্রবাহের খাল বন্ধ করে ভাটার দখলে নিয়েছেন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক খালের মাটি অপসারণের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ অনুযায়ী মাটি কিছুটা অপসারণ করা হলেও বেশিরভাগই রয়েছে ভরাট অবস্থায়। উল্টো স্থানীয় সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে হুমকি-ধামকি।
এদিকে, চারিগ্রামের মাটি ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ আলম পূর্ব চারিগ্রাম দক্ষিণপাড়া চকে প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা ফসলি জমি কেটে গভীর খাদ করে দেদারসে মাটি বিক্রি করছেন। এছাড়া হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের খোলাপাড়ার এএবি ইটাভাটার দক্ষিণপাশে হুনাখালি চক থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন ভাটা মালিক আব্দুল কুদ্দুস কোম্পানী। পাশাপাশি মেসার্স আউয়াল ব্রিকস নামের ৪টি ইটভাটার মালিক নুরুল হক কোম্পানীও সানাইল চক থেকে প্রকাশ্যে মাটি কেটে সাবাড় করছেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটা মালিকদের মদদে মাটি ব্যবসায়ীরা তৎপর রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, এভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। সেই সঙ্গে আগামী ১শ’ বছরের মধ্যে কোনো আবাদি জমিই থাকবে না।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে। রাতের বেলায় লজিস্ট্রিক সাপোর্ট না পাওয়ায় অভিযান পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে বলেও তিনি জানান।