মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন
ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে । ঘুর্ণিঝড়ে সরিষাসহ অন্যান্য রবি শস্য ও শাক-সবজির জমিসহ অনেক ফসলি জমিই পানির নিচে তলিয়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সদ্য বেড়ে উঠা উচু সরিষা গাছগুলো মাটিতে ন্যূয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আলুসহ অনেক শাক-সবজির জমি । কিছু কিছু জমিতে নব্য ফোটা সরিষার ফুলও ঝরে পরেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছে হাজার হাজার কৃষক। তারা এখন কি করবেন, কি নিয়ে বাঁচবেন, সে ভাবনা যেন তাড়া করছে সবাইকে। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে আনুমানিক শতাধিক মৌয়ালদের মৌ চাষ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ব্যাপকহারে বিভিন্ন জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া শাক-সবজির আবাদও হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় বেশি ।
বহুল প্রচলিত খনার বচন ,‘যদি বর্ষে আগণে- রাজা যায় মাগনে’। অর্থাৎ যদি অগ্রহায়ণ মাসে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে দুর্ভিক্ষে রাজাকে ভিক্ষা করতে হবে। হঠাৎ অসময়ে সাড়া দেশের ন্যায় পুরো সিংগাইরে বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর । অগ্রহায়ণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পার হচ্ছে আষাঢ়-শ্রাবণের মতোই অঝোর ধারায় বর্ষণের মধ্যদিয়ে। ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে অসময়ের এই বৃষ্টিপাত বিশেষ করে কৃষি সেক্টরে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। গত দু’তিন দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, এছাড়া অনেক স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হয়েছে। এতে ফসলের মাঠে মাঠে কৃষকের পাকা, আধপাকা আমনধান এমনকি জমিতে কেটে রাখা ধান এবং বোরো বীজতলা ভূমিস্যাৎ হয়েছে কিংবা পানিতে ভাসছে। ভাসছে ফল-ফসল, সবজিক্ষেত। পানিতে ভিজে-ডুবে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গাজর, সরিষা, ভুট্টা, তৈলবীজ, বাদাম, তিল, তিসি, মসুর, পেঁয়াজ-রসুন-আদা, আলুসহ শাক-সবজি ক্ষেতের। চোখের সামনেই ফসলের সর্বনাশ দেখে কৃষকের বুকে চাপা কান্না ও আর্তনাদ উঠেছে সবখানে।
কৃষি ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগন জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ দুর্বল হয়ে পড়ায় এর সরাসরি আঘাত না এলেও এর প্রভাবে অসময়ের বৃষ্টিপাতে কৃষি ও কৃষকের জন্য উপকারের তুলনায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে। উপকার সীমিত। অপকারই বেশি। বৃষ্টির ধারায় শুকনো মাটি ভিজে সতেজ সজীব হয়েছে। কেটে গেছে রুক্ষ আবহাওয়া। কিন্ত ফসলহানির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। ইউনিয়ন ওয়ারী বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরির কাজ শুরু করেছে।
সিংগাইরে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ধান-গমের বীজতলা, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে পচে গেছে বোরো ধানের বীজতলা। হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ শীতকালীন সবজির গোড়া পচে গেছে। রোববার (০৫ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) টানা বৃষ্টির ফলে অনাকাঙ্খিত ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ জেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে উপজেলায় মোট ৫,৫০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এদের মধ্যে ৪,০০০ হেক্টর জমির সরিষা, ৩১ হেক্টর জমির ধনিয়া, ২৫০ হেক্টও জমির গাজর ও ৮০০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজিসহ ৩১০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল রয়েছে । এতে টাকার অংকে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানাতে পারেনি । তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি এই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে।
সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের শাহাদাত (সাধু) অনেকের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা যারা কৃষক, আমাদের সব শেষ। আমাদের বাৎসরিক আয়ের একটা বড় অংশ আসে শীতকালীন সবজি থেকে। কয়েকদিন পরেই গাজর, লাল শাক, বেগুন, মূলা, পাতা কপি, ফুলকপি ও ওলকপি বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে শিকর পচে গেছে। রোদ পেলে বেশিরভাগ সবজি ঢলে পড়বে। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গলে আমাদের। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের আর্থিক সহযোগীতা কামনা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ টিপু সুলতান সপন বলেন, উপজেলায় শীতকালীন সবজি ও বেশকিছু রবি শস্যের জমি পানিতে সিমজ্জিত রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মূলত টাকার অংকে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়টি এখনো সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করবেন বলেও তিনি জানান।