শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ৯৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভিজিটের দিন ধার্য্য ছিল গত ২১ ডিসেম্বর। দিনটিতে ভিজিটরদের খুশি করতে স্কুলগুলো থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়। তবে এর বাইরে আরো ২০০ টাকা ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) ফরমের জন্য নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্কুল ভিজিটকে কেন্দ্র করে ভিজিটরদের উপহার সামগ্রী কেনার জন্য গত ২৭ নভেম্বর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসি) এক মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিটিংয়ে পূর্বের ম্যাসেজ অনুযায়ী স্কুল প্রতি ১ হাজার ৩০০ টাকা করে উত্তোলন করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
নয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, রাজেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, স্কুলগুলো পরিদর্শনের (ভিজিট) জন্য জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে আগত শিক্ষা অফিসারদের উপহার সামগ্রী-উপঢৌকন ও আপ্যায়ন ব্যয় হিসেবে মূলত এ টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে। বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক হোসেন বলেন, কিছু টাকা খরচের জন্য উঠানো হয়েছিল, সেটা ফেরত দিবেন। এছাড়া ৩ স্কুলের ভিজিটরদের আমার স্কুলে দুপুর বেলা খাবারের কথা রয়েছে। এ বিষয়ে আরো প্রশ্ন করা হলে তিনি রেগে গিয়ে অফিসে আসতে বলেন।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, আন-অফিসিয়ালি এ ভিজিট আই ওয়াশ মাত্র। ভিজিট স্থগিত হলেও আমাদের টাকা ফেরত দিতে গরিমসি করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের যোগ-সাজশে সাহরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান ও জনৈক নারী প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে ওই টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনকৃত টাকা এখন ভাগ-বাটোয়ারার পাঁয়তারা চলছে। তারা আরো জানান, ইতিমধ্যেই উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন সাফ জানিয়েছেন, ভিজিট না হলেও টাকা আর ফেরত দেয়া হবে না। বিদ্যালয়ের কাজেই ব্যয় করা হবে।
এ প্রসঙ্গে টাকা উত্তোলনকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ভিজিটের কথা বলে টাকা উত্তোলনের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে ভিজিট স্থগিত হওয়ায় সে টাকা উত্তোলন করা হয়নি।
সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, ভিজিটের কাজ আমাদের আরো দু’টি উপজেলায় হয়েছে। আপ্যায়ন ব্যয়তো শিক্ষকরাই করবেন। এটা সরকারি কোনো বরাদ্দে হচ্ছে না। শিক্ষকেরা টাকা তুলেছেন তাদের জিম্মায়ই আছে। প্রোগ্রামতো বাতিল করা হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারনে আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
সিংগাইর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নার্গিস আক্তার বলেন, জেলার সকল অফিসাররা মিলে একদিন আমার উপজেলায় স্কুলগুলো ভিজিট করতে আসবেন। তাদের অনার করার একটা বিষয় আছে। সব স্কুল থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়নি। কমপক্ষে ৩৩টি স্কুলে উনাদের জন্য খাবারের আয়োজন করতে হবে। গত ২১ ডিসেম্বর ভিজিটের নির্ধারিত তারিখ ছিল। আপাতত উনাদের বিশেষ জরুরী কাজে স্থগিত আছে। এটা নিয়ে নেগেটিভ কিছু পত্রিকায় না লিখারও অনুরোধ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার অধিকারী বলেন, সিংগাইরে এরকম কোনো প্রোগ্রামই দেয়া হয়নি। টাকা পয়সা উঠানো কিংবা উপহার দেয়ার বিষয়টা কোনোভাবেই সমীচীন না। করোনা পরিস্থিতির কারনে এ কার্যক্রম স্টপ রেখেছি। এখানে কর্মকর্তাদের উপঢৌকন নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। পাশাপাশি, ইতিপূর্বে সিংগাইর শিক্ষা অফিসের আগের অভিযোগগুলোর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এসএস