রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২০ অপরাহ্ন
সাভার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমর্জ্জিত । ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ও ভাইসপ্রিন্সিপাল নিজেদের মনগড়া নিয়মে চালাচ্ছেন কলেজ। ২০১৬ সালে সরকারি অনুমোদন পেলেও সরকারি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলেন তারা। কলেজ পরিচলনা কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার স্ত্রী ও ৭ মাস পূর্বে মৃত বাবার নাম ভাইসপ্রিন্সিপালসহ কয়েকজনের নাম রয়েছে। যার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
এখানে নিয়মানুযায়ি কমিটি বলতে কিছুই নেই। অবৈধ কমিটির বদৌলতে চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আবার নিয়ম ভঙ্গ করে প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল বেতন নিলেও শিক্ষকদের কোন প্রকার বেতন দেয়া হচ্ছে না। অথচ শিক্ষক নিয়োগের পর এবং অনুমোদনের পূর্বে চাকুরীর ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা রশিদ প্রদান করে নেয়া হয়েছে। রশিদ প্রদানের বাহিরেও টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। নিয়ম ভঙ্গ করে সরকারি চাকুরীজীবি ও অন্যাত্র কর্মরত এমন ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের রুটিন মাফিক ক্লাসে উপস্থিত করাতে কতৃপক্ষের কোন গরজ নেই। তবে ছাত্র ছাত্রীদের অভিযোগ তারা কলেজে আসলেও ক্লাশ হচ্ছে অনিয়মিত। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটডোরে নিয়মিত রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও তা কখনও করা হচ্ছে না। তবে নিয়ম রক্ষায় একাধিক বেড সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
অভিযোগে জানাগেছে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ও মন্ত্রনালয়ের নিয়ম অনুযায়ি সরকারি চাকুরি হতে নির্দিষ্ট বয়সসীমা অতিক্রম করার পর অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি সরকার অনুমোদিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালনে আইনগত বৈধতা নেই। কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাভার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আবদুল ওয়াদুদ দায়িত্ব পালন করছেন। নিজস্ব জমি না হওয়া পর্যন্ত কলেজের শিক্ষকগন বেতন নিতে পারবেন না মর্মে বোর্ড ও মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা রয়েছে এছাড়া কলেজের একাধিক সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও প্রিন্সিপাল কামাল হোসেন ও ভাইস প্রিন্সিপাল আবদুল ওয়াদুদ নিয়মিত বেতন গ্রহন করছেন। কলেজটিতে বর্তমানে প্রথম বর্ষে ৪৫জন দ্বিতীয় বর্ষে ৭০জন তৃতীয় বর্ষে ১০০জন ও চতুর্থ বর্ষে ১০৯জন শিক্ষার্থীসহ ৩২৪জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
এ সকল ছাত্র ছাত্রীদের নিকট হতে প্রতি বছরে বেতন,সেশন চার্জ,উন্নয়ন ফিসহ ২২হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। সে হিসেবে ফি বছরে আদায় হচ্ছে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা। হিসাব মতে অনুমোদনের পর ৫ বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এছাড়াও ছাত্র ছাত্রীদের নিকট হতে এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার সময় জন প্রতি ১০০০ টাকা আদায় করা হয়। এর বাহিরে কেন্দ্র ফি,প্রবেশ পত্র প্রদান বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। একই ব্যবহারিক খাতা একাধিক বার বিক্রয়,এ্যাপ্রোন বিক্রয়,আইডি কার্ড বিক্রয়,প্রি-টেষ্ট পরীক্ষা বাবদ,বই বিক্রয় বাবদসহ নানা ছল চাতুরী করে ছাত্র ছাত্রীদের নিকট হতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। যার সিংহ ভাগ ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল নিজেদের পকেটস্থ করেন। অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল কামাল হোসেন সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনী মাদ্রাসা মসজিদের নিকট ৬তলা বাড়ী, একাধিক প্লট,আশুলিয়ার জামগড়ায় বাড়ী ও বাড়ী সংলগ্ন মার্কেট গড়েছেন। ভাইস প্রিন্সিপাল আবদুল ওয়াদুদের পৌর এলাকার রাজাশনে বহুতল বিশিষ্ট দুটি বাড়ী ও নামে বেনামে একাধিক প্লট রয়েছে । হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে নিয়মানুযায়ি আউটডোর নিয়মিত খোলা রেখে রোগী দেখার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছেনা। যাদের আউটডোরে রোগী দেখার কথা তারা কেউই কলেজের নিয়মিত আসছেন না।
শিক্ষক নিয়োগের পর কলেজ অনুমোদনের পূর্বে চাকুরির ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের নিকট হতে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা করে কলেজের উন্নয়নের কথা বলে রশিদ প্রদান করে নেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ন আইন বিরোধী কাজ। বেশীরভাগ শিক্ষক ধার দেনা করে টাকা দিয়েছেন।শিক্ষক আশরাফুল হক,দবির হোসেন,নুরুল আলম,মিন্টু মিয়া,আবু তালহাসহ বেশ কয়েকজন জানান তারা অনেক কষ্ট ও ধার দেনার মাধ্যমে টাকা জোগার করে দিয়েছি। অথচ তাদেরকে কোন প্রকার বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছেনা। বেতন না পেয়ে অধিকাংশ শিক্ষক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নিয়োগকালে রশিদের বাহিরেও অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে। অপরদিকে বিধি লঙ্গন করে একাধিক শিক্ষক সাভার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চাকুরি করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ভাইস প্রিন্সিপাল আবদুল ওয়াদুদ আনবিক শক্তি কমিশনে সরকারি চাকুরি করাকালীন ১৯৯৪ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এমনকি ২০১০ সালে চাকুরি হতে অবসর গ্রহন করার পরে অদ্যবধি কর্মরত রয়েছেন এবং বেতন ভাতা গ্রহন করছেন। কলেজটির অবৈধ ম্যানেজিং কমিটির বদৌলতে ৭১ বছর বয়সেও তিনি চাকুরীতে বহাল রয়েছেন।
এছাড়া অপর শিক্ষক রেজাউল করিম মোল্লা সাভার পৌরসভার কর সেকশনে চাকুরিতে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড রেগুলেশন ১৯৮৫ এর ৮ (এইচ) এর ধারা লঙ্গন করে ম্যানেজিং কমিটির রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসক পদে তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্ত বিধি অনুযায়ি তার এ পদে থাকার কোন বৈধতা নেই।
কলেজটি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হওয়ার পর কৌশলগত কারনে প্রিন্সিপাল ও ভাইসপ্রিন্সিপাল ৫ বার স্থান পরিবর্তন করেছেন। বর্তমান সাভার পৌর এলাকার জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটির প্রবেশ পথের নিকট জালেশ^রে একটি আবাসিক ভবনের নীচতলা ও চতুর্থ তলায় ৮টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে সাভার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তার মধ্যে ৩টি কক্ষ অফিসের জন্য ৩টি কক্ষ শ্রেনী কক্ষের জন্য ও ২টি কক্ষ আউটডোরের জন্য নির্ধারন করা হয়েছে।
কলেজটি শর্ত সাপেক্ষ ২০১৬ সালে অনুমোদন পেলেও শর্তগুলো পালন হচ্ছেনা। অন্যতম শর্ত হচ্ছে ৫ বছরের মধ্যে নিজস্ব জায়গায় কলেজ স্থাপিত হতে হবে। কিন্তু জমি ক্রয়ের জন্য টাকা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এ সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরেও জমি ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। কলেজটিতে বর্তমানে ৩৬জন শিক্ষক রয়েছে। পাশাপাশি ৭জন খন্ডকালিন শিক্ষক কলেজটিতে কাজ করছেন। বর্তমানে কলেজ পরিচলনা কমিটি বলতে একটি পকেট কমিটি বিদ্যমান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামাল হোসেন কমিটিতে তার স্ত্রী ও ৮ মাস পূর্বে মারা যাওয়া তার বাবা সাহাজ উদ্দিনের নাম ও ভাইসপ্রিন্সিপাল আবদুল ওয়াদুদসহ কয়েকজনের নাম রয়েছে। এ কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখানে নিয়মানুযায়ি কমিটি বলতে কিছুই নেই।
কলেজটির শিক্ষক সমিতিরি সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান দীর্ঘ চেষ্টার পর ২০১৬ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর কলেজটি শর্ত পূরন না করায় আবার অনুমোদনহীন হওয়ার ঝুকিতে রয়েছে। তিনি বলেন কলেজটির আয় ব্যয়ের সাথে যারা জড়িত তারা কলেজের আভ্যন্তরীন অডিট কমিটিতে থাকতে পারেন না কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল নিজেদের গঠিত কমিটির জোরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অডিট সম্পন্ন করাচ্ছেন। শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন ইতিমধ্যে কলেজের নানা দূনীতির কথা লিখিত আকারে বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে।