শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন

নোটিশঃ
সারাদেশে ব্যাপী প্রতিনিধি/সংবাদদাতা নিয়োগ চলছে আগ্রহীরা ইমেইলে সিভি পাঠান- ‍admin@dailybdnews360.com  । আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ সবাইকে।
সংবাদ শিরোনামঃ

ডলার সংকটে আমদানি কম, নিত্যপণ্যের দামে অস্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার : ডলার সংকট, দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীরা নানা সুবিধা নেওয়ার পরও আমদানি কম দেখিয়ে দেশের বাজারে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আজ এক পণ্যের দাম বাড়লে কাল বাড়ছে আরেক পণ্যের দাম।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডাল, ছোলা ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। নিত্যপণ্যের এই উচ্চমূল্য বেকায়দায় পড়েছে নিন্ম ও মধ্য আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন রোজার এক সপ্তাহ আগে আর পণ্যের দাম বাড়ে না। এক দেড় মাস আগেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। রোজা এলে সেই দামটা স্থিতিশীল হয়ে যায়। পরে সেটা আর কমে না।

এদিকে রমজানে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ সুযোগে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মূলত আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। এবার ডলার সংকটের কারণে আমদানি নির্ভর তেল, চিনি ও ছোলাসহ কিছু পণ্যের এলসি খোলা কমে গেছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রোজায় এর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ফলে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা। এই পণ্যগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি।

জানা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধসহ ডলার সংকটের এই সময়েও সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের ‘আমদানি স্বল্পতা’ দেখিয়েছে দেশের বড় কোম্পানিগুলো। সেই তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি মূলধনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান ঋণপত্র (এলসি) খুলতে চাহিদামতো ডলার পায়নি। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ কোম্পানিগুলো এবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্ববাজারে কমলেও ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো। রমজান মাস সামনে রেখে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ানোর অপকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা।

ফলে রমজানে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। অন্যদিকে, এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজান মাসে আদা-রসুনের বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করা হতে পারে। ইতোমধ্যে ছোলা, চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।

শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর সুত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার, ধূপখোলা মাঠ, বাজার, শ্যামবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানভেদে ও আকারভেদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০-৫০ টাকা, চালকুমড়া পিস ৫০-৬০ টাকা। লাউ আকারভেদে ৬০-৭০ টাকা। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫০ টাকায়। শিম ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটল ৮০, করলা ৭০-৮০ টাকা ও প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৭০, ধুন্দুল ৫০-৭০ টাকা ও গাজর ৪০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া প্রায় অপরিবর্তিত আছে অন্যসব সবজির দাম। যদিও সবজির দাম ওঠা-নামার মধ্যেই থাকে।

এদিকে মুদিপণ্যের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা লিটার, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ১৮০ টাকা লিটার। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকা লিটার আগেছিলো ১৪০ টাকা। চিনি ১১৫-১২০ টাকা। খোলা আটা ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৯০-৯৫ টাকা। প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ৯৫-১০০ এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি জিরা ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ (নতুন) ৪০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা, আমদানিকৃত রসুন ১৩০-১৫০ টাকা, আদা (দেশি) ১৩০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজনে ডিমের দাম ১৩০-১৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা। গত সপ্তাহেও ১৩৫-১৪০ টাকা ছিল ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন। এছাড়া হাঁসের ডিম ২১০-২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ১৮০-১৯০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া স্থানভেদে রুই, কাতলা, মৃগেল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৪০০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩৪০-৩৬০ টাকা। তেলাপিয়া ২০০-২২০, পাবদা ৪০০-৬৫০, আইড় মাছ ৮০০ থেকে ১০০০, টেংরা ও গোলসা ৬০০ থেকে ৮০০, চিতল ৬০০, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫৫০, বাইলা ৬০০ থেকে ৭০০, মলা ৪৫০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১০০০, পাঙাশ ১৬০-১৮০, শিং মাছ ৪০০-৫০০ ও কৈ মাছ ২৫০-২৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইলিশ মাছ প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

অপরদিকে, বাজারে গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৭৬০ থেকে ৮০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও গরুর মাংস বিক্রি হতো ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। বাজারে খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ থেকে ১১০০ টাকা দরে। আগে বিক্রি হতো এক হাজার টাকায়। বাজারে আবারো দাম বেড়েছে মুরগির। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগে সোনালি মুরগির কেজি ছিল ৩১০-৩২০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। গত সপ্তাহে লেয়ার মুরগির কেজি ছিল ৩১০-৩২০ টাকা।

নয়াবাজারের মাংসবিক্রেতা মো. রাজু বলেন, খামারির খরচ বেড়েছে। বাড়তি দামে গরু ও খাসি কিনে সেই দাম মেলাতেই বাড়াতে হচ্ছে মাংসের দাম।

রায়সাহেব বাজারের আদর স্টোরের মহিবুল ইসলাম  বলেন, দাম যা বাড়ার দেড় মাস আগেই বেড়েছে। নতুন করে গত সপ্তাহে তেল, চিনি ও ছোলার দাম বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল কেজিতে ৫ টাকা ও পাম তেল ৩ টাকা বেড়েছে। চিনি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, ছোলা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ জিরা কেজিতে আড়াইশ টাকা বেড়েছে। এখন আর রোজার আগে তেমন দাম বাড়ে না। আগে যে দামটা বাড়ে সেটা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। এই বাজার ব্যবস্থায় সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

দয়াগঞ্জ বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. আশিক বলেন, ফের মুরগির দাম বেড়েছে। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বাড়তি। রোজার আগ পর্যন্ত মুরগির দাম বাড়তি থাকতে পারে।

সুত্রাপুর বাজারের সবজিবিক্রেতা মো. আবু বক্কর বলেন, শীতের সবজি শেষের দিকে। গ্রীষ্মকালের কিছু আগাম সবজি বাজারে এসেছে, সেগুলোর দাম আকাশচুম্বি। এছাড়া অন্যান্য দুই-একটি সবজির দাম বাড়তি আছে। গত ১৫ দিন ধরে বেগুন ও শসার দাম বাড়তির দিকে। আমরা দাম বেশি দিয়ে কিনি, বিক্রিও করি বেশি দামে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্সের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। কারণ ডলারের দাম বেশি ও সংকটের কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছি না। আগে যেখানে ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো, এখন সেখানে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হচ্ছে। অথচ সরকার এ বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আর যারা আমদানি করছে তারা বেশি দামে আমদানি করছে। তারা একটু সুযোগ নেবেই। সরকারকে মনিটরিং করতে হবে। বাজারে গিয়ে নয়। মনিটরিং করতে হবে কী দামে এলসি খোলা হচ্ছে এবং বাজারে কী দামে পণ্য ছাড়ছে সেখানে। এখন বাজারে যে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটা দাম বেশির জন্য ভোক্তারা পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তা না হলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি থাকতো।

এ প্রসঙ্গে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, রমজানের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে চলতি ভোজ্যতেল, চিনি ছোলা ও মসুর ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি হচ্ছে। তবে সেটা তুলনামূলক কম। ডলার সংকটের জন্য এটা হচ্ছে। তবে বর্তমানে বাজারে ছোলা প্রচুর রয়েছে। তেল ও চিনি আমদানি একটু স্লো। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে উৎপাদন কম। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলা যাচ্ছে না। কারণ ডলারের দাম অনেক ও সংকট রয়েছে। সে প্রভাব দেশের বাজারে পড়ছে। ডলারের সংকট না কমা পর্যন্ত দামও কমবে না বলে মনে করছেন তিনি।

বড় বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাহলে বাজারে পণ্য কীভাবে পাচ্ছেন। তারা আমদানি করছে বলে বাজারে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। আসলে দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের জন্য না, ডলারের বিপরীতে টাকার অমূল্যায়নের জন্য।

শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম জানান, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির এলসি খুলতে আমরাও চেষ্টা করছি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানিগুলোর এলসি খোলার তথ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের সঙ্গে জড়িত দেশের শীর্ষ ৩৬ কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি ভোক্তা সমাজ। এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের নিজস্ব আইনে ইতোমধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মামলা দায়ের করেছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৪৪ মামলায় ৩৬ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কমিশনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, তারা বাজারে চাল, আটা, ময়দা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি করেছে। রোজা সামনে রেখে মামলাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো এক অজানা কারণে এসব মামলার শুনানি দীর্ঘদিন স্থগিত রাখা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা ব্যবসা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করতে পারে সরকারি সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগ ইতোমধ্যে প্রমাণিত। এ কারণে মামলা করা হয়েছে এবং শুনানি শুরু করা হয়েছিল। দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে যারা অতিরিক্ত মুনাফা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন-২০১২তে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। এবার যে ৪৪টি মামলা করা হয়েছে, তার শুনানি শুরু করা হয়েছে। আশা করছি, শুনানি শেষে কমিশনের রায় মেনে নেবেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি জানান, আইন অবাধ্যে ফৌজদারি মামলা করবে কমিশন। এদিকে, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। দেশে এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য। নিত্যপণ্যের দাম এত বেড়েছে যে, চাল কিনলে ফুরিয়ে যাচ্ছে লবণের পয়সা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নিত্যপণ্য আমদানির এলসি খোলা কমেছে ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এলসি-নিষ্পত্তি কমেছে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। চাল ও গম আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও ১৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। চিনি ও লবণে এলসি খোলা কমেছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, নিষ্পত্তি কমেছে ২০ শতাংশ।

দুগ্ধজাত পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ফল আমদানির এলসিতে শতভাগ মার্জিন আরোপ করায় চলতি অর্থবছরের সাত মাসে এলসি খোলা কমেছে ৪০ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর এলসি-নিষ্পত্তি কমেছে ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ডাল আমদানি কমেছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, পণ্যটির এলসি-নিষ্পত্তি বেড়েছে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এখন বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো, তাই পেঁয়াজের এলসি খোলাও কমেছে। আলোচ্য সময়ে পেঁয়াজের এলসি খোলা কমেছে ২২ দশমিক ২১ শতাংশ আর নিষ্পত্তি কমেছে ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। মসলা আমদানির এলসি কমেছে ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর নিষ্পত্তি কমেছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

ব্যতিক্রম শুধু ভোজ্যতেল। সয়াবিন তেলের আমদানি বেড়েছে। তবে শুল্কছাড় দেওয়ার পরও সয়াবিনের দাম কমানো সম্ভব হয়নি। বিশ্ববাজারে দাম কিছু কমলেও দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এর দাম গত এক বছরেও খুব একটা কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের এলসি খোলা বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রকাশিত ঢাকা মহানগরীর নিত্যপণ্যের বাজারদরে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে নাজির ও মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছর এসব চালের দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। এ বছর হয়েছে ৬০-৭৫ টাকা। মাঝারি ও মোটা চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫৫ ও ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। খোলা আটার দাম বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে ৫২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গম আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ডাল আমদানি কমে যাওয়ায় বেড়েছে মসুর ডাল ও অ্যাংকর ডালের দাম। এ দুটি ডালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭৭ ও ৪৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

আলোচিত সময়ে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে চিনি ও লবণের আমদানিও কমেছে। যার প্রভাবে বাজারে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ আর লবণের বেড়েছে ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের আমদানি অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। যদিও আলোচিত সময়ে কমেছে পাম অয়েলের দাম। পাম অয়েলের দাম কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

আর্কাইভ

SatSunMonTueWedThuFri
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728   
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728    
       
891011121314
22232425262728
293031    
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
       
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
   1234
       
     12
       
  12345
2728     
       
  12345
27282930   
       
28293031   
       
891011121314
29      
       
    123
18192021222324
       
      1
2345678
30      
© All rights reserved © 2019 Dailybdnews360.Com
Design & Developed BY-Dailybdnews360.com
error: কপি করা যাবে না !!