শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

নোটিশঃ
সারাদেশে ব্যাপী প্রতিনিধি/সংবাদদাতা নিয়োগ চলছে আগ্রহীরা ইমেইলে সিভি পাঠান- ‍admin@dailybdnews360.com  । আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ সবাইকে।
সংবাদ শিরোনামঃ

যেসব দুর্নীতিতে ভণ্ডুল অনলাইন ক্লাস প্রকল্প

দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া আইসিটি মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের জুনে। এই তিন বছরে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশ। তবে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। এ দুর্নীতি না হলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশের অনলাইন পাঠদানে ঘটতে পারতো যুগান্তকারী কিছু, আসতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

প্রশিক্ষণ পরিচালনায় কোনও ভেন্যু সরেজমিন পরিদর্শন না করেও প্রকল্প পরিচালক সম্মানি বাবদ ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন। এই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। দেশে প্রথমবার কোনও প্রকল্পে এমন নজির সৃষ্টি হল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ঠিকাদারদের সন্তুষ্ট করতে না পারায় প্রথম প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই সুযোগে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আস্থাভাজনকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে প্রথম পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রথম প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর শুরু হয় আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি। শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে অর্থ তছরুপ এবং প্রকল্প পরিচালকের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অর্থ ব্যয় করা হয়।

প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। অধিদফতরের উপরিচালক হেনা খাতুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষা পরিদর্শক মো. হেমায়েত উদ্দীন এবং অডিট অফিসার মো. ফরিদ উদ্দিন। তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আরও দুটি তদন্ত হয়েছে। সেসব তদন্তেও আর্থিক দুর্নীতর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আইসিটি প্রকল্পে দুর্নীতি ও প্রকল্পে অগ্রগতি না থাকার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘করোনার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে। শুধু আইসিটি প্রকল্প নয়, যেকোনও প্রকল্পেই দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বছর মেয়াদ বাড়ালেও এখন পর্যন্ত আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি হয়নি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বর্ধিত মেয়াদের ৬ মাসও শেষ হয়েছে।

প্রকল্পের পূর্ণ মেয়াদকালে মাল্টিমিডিয়া ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্লাস পরিচালনার জন্য ২৪ হাজার ৩০৯টি ব্যাচের মাধ্যমে সর্বমোট ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ জন শিক্ষক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ভেন্যুতে ১২ ধরনের প্রশিক্ষণের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

ইচ্ছেমতো কেনাকাটা

৭৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৫ টাকার প্রশিক্ষণ সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে ক্রয় প্রক্রিয়ার আগেই ২০১৯ সালের ৬ মার্চ প্রশিক্ষণ সামগ্রী গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ২ মে কার্যাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে শুধু কাগজে ক্রয় প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ক্রয় প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রশিক্ষণ সামগ্রী গ্রহণ করা হয়েছে।

কোনও প্রকার দরপত্র, ক্রয়বিধি ছাড়াই ২ কোটি ২৫ লক্ষ ২ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ সামগ্রী ভেন্যুর মাধ্যমে না নিলেও বিল পরিশোধ করা হয়েছে ভেন্যুর মাধ্যমে।

ভুয়া বিল ও অস্বাভাবিক কোটেশন

প্রতিবেদনে বেলা হয়, সরবরাহকারীর ডেলিভারি চালান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত মালামাল সরবরাহ করা হয় এবং ৬ মার্চ মালামাল গ্রহণ করা হয়। ১ এপ্রিল ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই মালামাল গ্রহণ প্রমাণ করে কোনও দরপত্র ছাড়াই মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। পরে শুধু ক্রয় প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চ থেকে এপ্রিলে ৯টি কোটেশনে কেনা হয়েছে ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রশিক্ষণ সামগ্রী। অথচ কোটেশনে প্রকল্প পরিচালকের ক্রয়ক্ষমতা বছরে ৩০ লাখ টাকা। সরকারি ক্রয়নীতি অনুযায়ী কমপক্ষে ১৫ দিনের স্থলে মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই কোটেশন প্রক্রিয়াকরণসহ ক্রয়কার্য সম্পন্ন হয়েছে কোনও ক্ষেত্রে।

প্রশিক্ষণ সনদ ছাপানোয় অবৈধ ব্যয়

২ কোটি ১০ লাখ ৪৭ হাজার টাকার ইনহাউজ ট্রেনিং ম্যানুয়াল ও সার্টিফিকেট ছাপানো হয় দুটি টেন্ডারে। দরপত্রে সার্টিফিকেট ছাপানোর উল্লেখ না থাকলেও কার্যাদেশে ১ লাখ ৩৩ হাজার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালের সঙ্গে সমসংখ্যক সনদ ছাপানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। যা বিধিবহির্ভূত।

ঢাকা থেকে ক্রয় আর ভেন্যু থেকে বিল পরিশোধ

কোটেশান, নগদ এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বমোট ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকার প্রশিক্ষণ সামগ্রী কেনা হয়। পরিচালকের ভাষ্যমতে, ক্রয়ক্ষমতা শেষ হয়ে যায় এবং ভেন্যু-প্রধানকে ডিডিওশিপ দেওয়া হয়। এভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ কেনাকাটা হয়। প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, সার্টিফিকেট কীভাবে প্রিন্ট হলো এবং কীভাবে আনিশা এন্টারপ্রাইজ সরবরাহ করলো তারও কোনও তথ্য নেই। এমনকি ব্যাচপ্রতি ২০০০ টাকার পরিবহন ব্যয়ও আনা হয় ভেন্যু থেকে রাজধানীর আনিশা এন্টারপ্রাইজের প্যাডে। প্রকল্পে কেনা মালামালের কোনও স্টক এন্ট্রি নেই। এমনকি কোনও কার্যাদেশও নেই আনিশা এন্টারপ্রাইজের নামে।

প্রশিক্ষণ সামগ্রী পৌঁছায়নি ভেন্যুতে

গতবছরের জুনে প্রশিক্ষণ শেষ হলেও তদন্ত শুরুর পর সেপ্টেম্বরে কোনও কোনও ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ সামগ্রী পৌঁছায়। শুধু কুমিল্লা টিটিসিতেই ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল পৌঁছায়নি।

সন্মানির টাকাও আত্মসাৎ

দুটি প্রশিক্ষণ কোর্সের (বিটিটি ও এইচআইটি) চিফ কো-অর্ডিনেটরের সন্মানি বাবদ ১৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই তারিখ ও প্রায় একই সময়ে একজন কর্মকর্তা ১০/১৫টি ব্যাচের ক্লাসের সন্মানিসহ ১০/১৫টি সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সম্মানি নিয়েছেন। কম্পিউটার অপারেটর এবং অফিস সহায়কের সন্মানির অর্ধেক ৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রশিক্ষণ ভেন্যু থেকে প্রকল্পে নিয়ে আসা হয়। পরিচালক মাধ্যমিকের তদন্তে রাজশাহী টিটিসি এবং ডিআইয়ের তদন্তে চট্টগ্রাম টিটিসিতে এর প্রমাণ রয়েছে।

প্রশিক্ষণ ক্রেন্দ্রে অবৈধ ব্যয়

বিটিটি ও এইচআইটি কোর্সের ১১২১ ব্যাচের ভেন্যুচার্জ বাবদ ১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা প্রশিক্ষণ ভেন্যুর অপব্যবহার করেছে। কিন্তু রুমচার্জ ও ইন্টারনেট বিলের বিষয়ে কোনও বক্তব্য নেই ডিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্যে প্রকল্প পরিচালক সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সবুর খান সরেজমিন কোনও ভেন্যুর কোনও প্রোগ্রাম পরিচালনা করার রেকর্ড না থাকায় তার গ্রহণ করা ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য।

ডিআইএ-এর তদন্ত এবং সম্মানির টাকা ফেরতের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সবুর খান বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এসব কথা বলতেও ভালো লাগে না। যা ডকুমেন্ট আছে তার সঙ্গে এসব (তদন্ত প্রতিবেদন) কথা মেলে না। আমি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, এটাই আমার সারকথা।’

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল সারাদেশে প্রায় ৪৮ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং প্রায় ৬ লাখ শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়া ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বর্তমান কোভিড-১৯ কালে অনলাইন ক্লাস পরিচালনায় যে একটা যুগান্তকারী ঘটনা ঘটতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

আর্কাইভ

SatSunMonTueWedThuFri
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728   
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728    
       
891011121314
22232425262728
293031    
       
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
       
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
   1234
       
     12
       
  12345
2728     
       
  12345
27282930   
       
28293031   
       
891011121314
29      
       
    123
18192021222324
       
      1
2345678
30      
© All rights reserved © 2019 Dailybdnews360.Com
Design & Developed BY-Dailybdnews360.com
error: কপি করা যাবে না !!